মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে আবারও অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবারের অভিযানে আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের ৬টি গরু জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (৩ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি টিম ওই অভিযান পরিচালনা করে। 

মঙ্গলবার আমদানি নিষিদ্ধ গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউজে গিয়েছিল ওই টিম। তালিকা সংগ্রহের পরই বেশকিছু নতুন তথ্য উঠে আসে। যে কারণে আজ আবারও মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক।

এ বিষয়ে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগের অভিযানের ধারাবাহিকতায় আজ আবারও এনফোর্সমেন্ট অভিযান হয়েছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

গত ১ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের পৃথক তিনটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাদিক অ্যাগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মে দিনভর অভিযান চালায়। অভিযানে ৪৮৮ গরু জবাই, মাংস বিতরণ ও ৬০০ টাকা কেজি হিসাবে আদায় করা টাকা সরকারি তহবিলে জমা সংক্রান্ত বেশকিছু অসংগতি কিংবা অনিয়ম পায় দুদক টিম।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযানে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র টিম সংগ্রহ করে টিম। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের ফার্মে দুই শতাধিক বিদেশি গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর ৭টি বাছুরও রয়েছে। ওইদিন গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোর নরসিংদীর ফার্মে অভিযান চালায়। তবে ওই অভিযানে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।

ওইদিন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২১ সালে বিদেশ পথকে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা প্রজাতির গরু কাস্টমস থেকে জব্দ করা হয়। সেগুলোকে পরে লালন-পালনের জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত রোজার ঈদে গরুগুলোর মাংস বিক্রির জন্য কমিটি করা হয় এবং মাংস বিক্রি করা হয়। অভিযানে সাভারে এসে একটি শেডে ৫টি ব্রাহমা প্রজাতির গরু ও ৭টি বাছুরের সন্ধান মিলেছে। এরপর একটি ঘরে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটি পাওয়া গেছে। অভিযানে বেশকিছু তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানের প্রাপ্ত বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করা হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ১৮টি ব্রাহমা গরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। কিন্তু গরুগুলো গ্রহণ করার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের কেউ যায়নি। পরে জানা যায়, ওই গরুগুলোর আমদানিকারক সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে ওই গরু আমদানি করা হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পর সরকার ২০১৬ সালে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সূত্র আরো জানায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক অ্যাগ্রো। এগুলোর মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। সে সময় সাদিক অ্যাগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। এগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র। এর প্রতিটিই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। জাল নথি দিয়ে গরু আনার ঘটনায় ওই সময় মামলা হয়। আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত রাখা হয় ওই সরকারি খামারে। আর সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্রাহমা জাতের একাধিক গরু সাদিক অ্যাগ্রোতে থাকাসহ গরু চোরাচালানের অভিযোগ ছিল সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে।

আরএম/জেডএস