ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম বেশি
বাজারে অভিযানের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ঈদের পর হঠাৎ ১৮০ টাকা ডজন হওয়া ডিম ২০ টাকা কমে নেমেছে ১৬০ টাকায়। তবে এটিকে স্বাভাবিক আচরণ বলছে না জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, প্রতিবেশী দেশের (ভারত) তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম বেশি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২ জুলাই) কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের সভা কক্ষে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে অংশ নেন ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এর আগে গত ২৪ জুন ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে 'হাতবদলে প্রায় দেড় গুণ দাম বৃদ্ধি, ডিমের লাভ খাচ্ছে কারা?' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। এরপর গত ২৬ ও ২৭ জুন ডিমের বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে ডিমের দাম কিছুটা হ্রাস পায়।
সভার শুরুতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার তদারকি/অভিযান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বাজারে হঠাৎ ডিমের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে গত ২৬ জুন ও ২৭ জুন ঢাকা মহানগরীর কারওয়ান বাজার ও কাপ্তান বাজারে ডিমের মূল্য সংক্রান্ত বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালিত অভিযানের ফলে ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক আচরণ নয়।
আরও পড়ুন
সভায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অভিযান পরিচালনাকালে ডিম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসংগতি যথা- বিভিন্ন ফার্মের ক্যাশমেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ না থাকা, ক্যাশ মেমোতে দর উল্লেখ না থাকা, ডিম ক্রয়ের ক্যাশমেমো না থাকা, হাত বদলের মাধ্যমে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি করা, পাইকারি আড়তে ডিম বিক্রিতে ক্যাশমেমোতে কার্বন কপি না থাকা, খুচরা ডিম বিক্রিতে ক্যাশ মেমো না দেওয়া, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, সাদা ক্যাশমেমো প্রদান করা এবং একটি আড়তে তদারকি করতে গেলে অন্য সব আড়ত বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি বিষয় দেখা যায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আরমান হায়দার বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষের প্রাণীজ পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশে বছরে ডিমের চাহিদা প্রায় ১৮০৬ কোটি এবং ডিম উৎপাদন হয় প্রায় ২৩০৬ কোটি। অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডিম উদ্বৃত্ত থাকে। ডিমের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শরিফুল হক বলেন, ডিম একটি আদর্শ পুষ্টিমাণযুক্ত খাদ্য। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য উৎপাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় সাধন করে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডিমের দাম বেশি। দেশে পোল্ট্রি ফিডের উপাদান ও মেডিসিন আমদানি শুল্কমুক্ত করা আছে এবং ফিড উৎপাদন সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক রেয়াত প্রদান করা হয়েছে। তারপরও দেশে পোল্ট্রি ফিডের মূল্য বেশি। পোল্ট্রি ফিডের পাশাপাশি ডিমের সরবরাহ চ্যানেল নিয়ে স্টাডি করা প্রয়োজন।
বিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ পরিবর্তনশীল। ডিম উৎপাদকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাদের দিয়ে ডিমের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেশন সম্ভব নয়। ডিমের ক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইনে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করে। অপর দিকে খামারিরা জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে ভোক্তারা কম মূল্যে ডিম পাবে।
তার মতে, ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.২৯ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে এর যৌক্তিকমূল্য ১২.৫০ টাকা। তিনি এসএমএস-এর মাধ্যমে ডিমের মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পাশাপাশি খামার থেকে ডিমের মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।
সভা শেষে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায় দেখা যায়, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.৮৮ টাকা। ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বিপণন সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। অভিযানে দেখা যায়, একই ট্রাকে ডিম রেখে তিন বার হাত বদলের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রতিটি ডিমের মূল্য গড়ে প্রায় ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়।
মহাপরিচালক বলেন, পাকা ভাউচার ছাড়া ডিমের কোনো লেনদেন হবে না। পাকা ভাউচার পাওয়া গেলে আমরা ট্র্যাক করতে পারব ডিমের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্য কত এবং কত লাভ করা হয়েছে। এখন অভিযান পরিচালনাকালে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, এই সেক্টরকে সুসংগত করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিম বিক্রয়ের কারসাজির ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএইচএন/এসকেডি