রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিকপাড়াখ্যাত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ একসময় দেশি-বিদেশিদের কোলাহলে মুখর থাকত। তবে ২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যা নামতেই ‘আঁধারে’ ঢেকে যায় রেস্তোরাঁটি। সেখানে ঘটে যায় দেশের সবচেয়ে বড় ও নারকীয় জঙ্গি হামলা। হামলায় সেই রাতে ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২২ জন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেক সদস্য। ইতিহাসের জঘন্যতম সেই হামলার ৮ বছর আজ।
 
ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে জঙ্গিদের নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের ব্লু-প্রিন্ট। বিভিন্ন সময় এ হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজশের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গি-উগ্রবাদ মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। শুরু হয় একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান। হলি আর্টিজান হামলার পর এক হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে নিহত হন জড়িত আটজন জঙ্গি। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী (৩৩), রুল ইসলাম মারজান (২৩), সারোয়ার জাহান মানিক (৩৫), তানভীর কাদেরী (৪০), বাশারুজ্জামান চকলেট (৩২), মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (৩৭), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২) এবং রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০)।

হলি আর্টিজানের পরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) মোট ৮২৬ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে জেএমবির ২০০ জন, নিউ জেএমবির ১৮০ জন, আনসাল আল ইসলামের ২৩০ জন, হরকাতুল জিহাদের ১৫ জন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ১৮ জন, নতুন জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার ৪১ জন এবং সংগঠন উল্লেখ নেই এমন ২২ জন রয়েছেন।

এছাড়া হামলার পর র‍্যাব এক হাজার ৮৭৫ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে ৮৭৩ জন জেএমবি সদস্য, হরকাতুল জিহাদের (হুজিবি) ৩৭ জন, হিযবুত তাহরীরের ১০৪ জন, আনসার আল ইসলামের ৪৭৩ সদস্য, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৮২ সদস্য এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ৩০৬ জন সদস্য রয়েছেন। 

হলি আর্টিজান হামলার পর ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের পর বড় ধরনের কোনোও জঙ্গি হামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে বিভিন্ন সময় জঙ্গিরা উত্থানের চেষ্টা চালালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাথা তুলে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় জঙ্গিরা। 

এদিকে গত বছরের ৩০ অক্টোবর হলি আর্টিজান হামলার মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। তারা এখন কারাগারে। 

অন্যদিকে ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর দিনে-দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। দেড় বছরেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা পলাতক দুজনের একজনকেও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মতাদর্শ কখনো মরে না। জঙ্গিবাদের মতো উগ্রপন্থার মতাদর্শকে মোকাবিলা করতে হবে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে। যদিও হলি আর্টিজানের মতো আর বাংলাদেশে বড় হামলার ঝুঁকি দেখেন না তারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বড় হামলার ঝুঁকি নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে বলে স্বস্তি-তুষ্টির সুযোগ নেই।

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে আনসার আল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার বাংলাদেশি শাখা (একিউআইএস) বলা হয় এই সংগঠনটিকে। সম্প্রতি আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমের ধরন দেখে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন আল-কায়েদা থেকে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নেমেছে তারা। বড় কিছু করার উদ্দেশ্যে পুরোনো ও বিশ্বাসযোগ্য সদস্যদের যেকোনো মূল্যে কাছে পেতে চাইছে সংগঠনটি। তবে ঠিক কী নির্দেশনা আনসার আল ইসলামের কাছে এসেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। 

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে জানান, বাংলাদেশে এটিইউ, সিটিটিসি ও র‍্যাব মিলে আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে মনে করি জঙ্গিদের হামলার কোনো সামর্থ্য নেই। তবে জঙ্গিবাদের বিষয়ে পরিতৃপ্তি থাকা যায় না। পরিতৃপ্তি থাকলেই জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে কাজ করে। আমরা অ্যালার্টে আছি। সামগ্রিকভাবে খারাপ কিছু আশা করছি না।

জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নব্য জেএমবির সদস্যরা হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নব্য জেএমবি। তারপরেও তারা থেমে নেই। যারা গ্রেপ্তার হয়নি বা বাইরে ছিল তারা সংগঠনটিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তবে সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে শনাক্ত করেছি। এই মুহূর্তে জঙ্গিবাদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। 

ডিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর ধারাবাহিক অভিযান, নজরদারির কারণে জঙ্গিবাদ এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে হলি আর্টিজান হামলার মতো বড় কোনো হামলার শঙ্কা করছি না। সে ধরনের সক্ষমতাও তাদের আর নেই। তবে এটা ভেবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। জঙ্গিবাদকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। আমাদের জঙ্গিবাদ বিরোধী সমন্বিত চেষ্টা, কার্যক্রম ও মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। 

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জঙ্গিদের বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র‍্যাব একের পর এক শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। ধারাবাহিক অভিযানের ফলে জঙ্গিরা এখন মাথা চাড়া দিতে পারছে না। এরপরেও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। 

জামিন নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে বলেন, জামিন পাওয়া জঙ্গিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি রয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয় সে মামলাগুলো মনিটরিং করা হয়। এছাড়া সাইবার স্পেসে যাতে কেউ উগ্রবাদ ছড়াতে না পারে সেজন্য সাইবার ওয়ার্ল্ডেও নজরদারি করা হয়। 

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশকে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন, সেটি হলো বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। যার অন্যতম উদ্দেশ্য দেশব্যাপী জনসচেতনতা কার্যক্রম তৈরি করা। আরেকটি হলো ডি-রেডিকালাইজেশন। আমরা কাজ দুটি শুরু করেছি। এরইমধ্যে ৫৪ জনকে ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, প্রাথমিক তথ্য মিলছে তাদেরকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনা হচ্ছে। এছাড়া যারা আটক হয়েছে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অতীতের আদর্শে অথবা সাজা খেটে বের হচ্ছে তাদেরকে ডি-রেডিকালাইজেশনের আওতায় আনা হয়। জেলখানায় দুটি ব্যাচকে ডি-রেডিকালাইজেশন করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে আটজন করে ১৬ জনকে এই প্রোগ্রামের আওতায় এনেছি। যারা জামিন পাবেন বা সাজার মেয়াদ শেষ হতে আরও দু-একবছর লাগবে তাদেরকেও নিয়ে এই প্রোগ্রাম করেছি। 

হলি আর্টিজানে হামলার বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেদিন অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার সামনে দুজন অফিসার মারা গেল তা ভুলতে পারিনি, সেদিন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর কিন্তু আমি আইজিপি হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। পুলিশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তী দেড় বছর আমি জঙ্গিবাদ বিরোধী বিশেষ অভিযান করেছি। একটার পর একটা জঙ্গি আস্তানা বের করে গুঁড়িয়ে দিয়েছি। অনেকে মারা গেছে, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে, কেউ নিজে থেকে আত্মাহুতি দিয়েছিল। দেড় বছরে বাংলাদেশে জঙ্গি প্রায় নির্মূলই করে ফেলেছিলাম। আমি সিরিয়াসলি জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলাম। হয়তো শতভাগ পারিনি, তবে ৯০ শতাংশ সফল হয়েছি।

তিনি বলেন, এখন জঙ্গি যা আছে তা খুব একটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারেনি, আশা করি পারবেও না। জঙ্গিবাদ ড্রাগ এডিকশনের মতো, মানসিক রোগ। তাদের ফিরিয়ে আনা অনেক কঠিন। তবে সবাইকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গিবাদ বিরোধী কাউন্টার পার্ট ছাড়াও ডি-রেডিকালাইজেশন করতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জঙ্গিবাদ তো একটা আদর্শ। যেকোনো মতাদর্শ বহু বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। যারা আগে আন্ডারগ্রাউন্ড বামপন্থি মতাদর্শের ছিলেন, তারা কি সবাই সেখান থেকে বের হতে পেরেছে? পারেনি। এখনো অনেকে সেটা লালন করেন। যারা কট্টরপন্থি কমিউনিস্ট তারাও কিন্তু এখনো আছে। মতাদর্শ অনেকে ধারণ করেন, জঙ্গিবাদ বা ধর্মীয় উগ্রবাদও একটা কট্টর দক্ষিণপন্থি মতাদর্শ। বৈশ্বিকভাবে অন্য কোনো মতাদর্শের রিপ্লেস না। এটার প্রভাব রয়ে গেছে। তবে কতটা কার্যকর সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, এখনো কট্টরপন্থি কমিউনিস্ট মতাদর্শের লোক পাওয়া যাবে। যারা শ্রেণি সংগ্রামে বিশ্বাস করেন। এখনো তাদের পাবেন নেপাল, ইন্ডিয়াতে। এখনো মাওবাদী পাবেন ইন্ডিয়াতে। বর্তমানে এই জঙ্গিবাদী মতাদর্শের কেউ থাকলেও থাকতে পারে বাংলাদেশে। তবে সেটাকে বড় কোনো হুমকি মনে করি না। 

একটা সময় ছিল যখন বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদী মতাদর্শ অনেক উগ্র অবস্থায় ছিল। আইএস, আল কায়েদার উত্থান ছিল। জেএমবি, হুজিবির উত্থান তখন। আইএস; তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়েছিল মুসলিম বিশ্বে। যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। এর চূড়ান্ত প্রভাব বা কার্যক্রম ছিল হলি আর্টিজান হামলা। এখন কিন্তু বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদী কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো নানা নামে কার্যক্রম চালালেও আমি বড় হুমকি মনে করছি না। হলি আর্টিজানের মতো কিছু ঘটার সম্ভাবনা দেখি না।

তবে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদী মতাদর্শের যে প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছিল সেটা কিন্তু আমাদের নিজেদের দোষে হয়েছে। আমরা নিজেরা সোসাইটিকে সতর্ক করতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে খুব সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়েছিল বলে আমার মনে হয় না। তবে এখন কিন্তু অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।

জেইউ/জেডএস