বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিক নিতে চায় ইতালি-জার্মানিসহ ইউরোপের আরও বেশ কয়েকটি দেশ। দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ লাখ ইউরো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। সেটি এই সপ্তাহের মধ্যেও হতে পারে।

পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে ইইউর সঙ্গে ঋণ চুক্তি চলতি মাসের শেষের দিকে সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ অবধি তা সম্ভব হয়নি। তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটি সই করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার ইইউ মিশন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ঢাকা অফিস এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঋণ চুক্তিটি সই করা হবে।

যেসব দেশে পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে দক্ষ কর্মী পাঠানো যাবে তার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে থাকবে দক্ষ শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরি, প্রশিক্ষণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ মডিউল নির্ধারণ, প্রশিক্ষণের পরে সঠিক নিয়মে সার্টিফিকেট প্রদান এবং ভাষাগত দক্ষতা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে ৩০ লাখ ইউরো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ইইউ। এ সংক্রান্ত একটা ঋণ চুক্তি সই হবে। আমরা আশা করি, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ঋণ চুক্তিটা সই হয়ে যাবে। এরপর পুরো প্রক্রিয়া শুরু হবে। কীভাবে দক্ষ কর্মী নির্বাচন করা হবে এবং কোন কোন খাতে আমাদের দক্ষ লোক আছে; এগুলো যাচাই করার কাজ শুরু করে দেব।

পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে এরই মধ্যে ইতালি, জার্মানি, রোমানিয়া এবং গ্রিস বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ১০টি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে চায়। ইইউর এ চারটি দেশসহ অন্যান্য যেসব দেশে পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে দক্ষ কর্মী পাঠানো যাবে তার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে থাকবে দক্ষ শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরি, প্রশিক্ষণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ মডিউল নির্ধারণ, প্রশিক্ষণের পরে সঠিক নিয়মে সার্টিফিকেট প্রদান এবং ভাষাগত দক্ষতা।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে ইউরোপে দক্ষকর্মী পাঠানো যায় এমন কয়েকটি খাত চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্টরা। যেমন- তৈরি পোশাক, আইসিটি, কৃষি, জাহাজ নির্মাণ, নির্মাণশিল্প, ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য ইইউর সঙ্গে আমাদের এসওপি (অবৈধদের ফেরানোর চুক্তি) করা আছে। এ চুক্তির আওতায় ইতালি, জার্মানিসহ ইইউর কিছু দেশ থেকে খুব স্বল্প পরিমাণে অবৈধদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলমান আছে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো অবৈধ পথে অভিবাসন ঠেকাতে দিন দিন কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। তারা চায়, অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ হোক। ইইউর অনেক দেশে দক্ষ কর্মীর দরকার। ইউরোপের চারটি দেশ আমাদের থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে ইউরোপে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে।

দেশের রিক্রুটিং এজেন্সি এবং বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে সাধারণত বিদেশে কর্মী পাঠানো হয়। তবে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীদের বিদেশ গিয়ে প্রায় প্রতারিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে কর্মী পাঠানোর একমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ বোয়েসেলের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে এরই মধ্যে ইতালি, জার্মানি, রোমানিয়া এবং গ্রিস বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ১০টি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে চায়।

পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে ইউরোপে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে— এমন প্রশ্নে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় যে প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে থাকি, সেটাই সবচেয়ে উত্তম হবে বলে আমি মনে করি। যে আওতায় ইইউ লোক নিতে চায় সেটার রিক্রুট প্রক্রিয়া তাদের হাতে রাখবে।  

গত এপ্রিলের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ স্কিমের অধীনে ইউরোপে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউরোপে দক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি রোডম্যাপ তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

আরও পড়ুন

এ প্রসঙ্গে অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, আমরা সেই অর্থে কিন্তু এখনো দক্ষ কর্মী প্রস্তুত করতে পারিনি যেটা ইউরোপ চায়। কিছুটা হয়ত আমরা পাঠাতে পারব। যেমন- আইটি খাতসহ আরও কিছু খাতে আমাদের দক্ষ লোকজন আছে তাদের পাঠাতে পারব। কিন্তু সাধারণ কর্মী দিয়ে তো এটা সম্ভব হবে না। কেননা, আমাদের ওই রকম ট্রেনিং দেওয়া লোকজন নেই। সেজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার শুরু থেকে স্পেশালাইজড প্রশিক্ষণ সিস্টেম চালু করতে হবে। কর্মীদের শিক্ষাগত পরিবর্তনের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে, টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটা এক বা দুই মাস ট্রেনিং দিয়ে হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে। এর আওতায় ইইউর দেশগুলোর বাইরে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার কথা বলা হয়। এ ঘোষণা পর থেকে ইউরোপে দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা।  

এনআই/এমজে