দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে ডলার সংকট। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। রেমিট্যান্স-রপ্তানিসহ বৈদেশিক আয়ের চেয়ে আমদানি দায় ও বিদেশি ঋণ পরিশোধে বেশি ডলার খরচ করতে হচ্ছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে নানা উপায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে এবার সৌদি আরব থেকে তহবিল পেতে দেশটির সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ।

স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) রিয়াদে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংলাপে বসছে। বৈঠকে বাংলাদেশের লিখিত আলোচ্য সূচিতে রিজার্ভের কথা উল্লেখ না থাকলেও বিষয়টি তোলা হবে এবং রিজার্ভ সংকট কাটাতে সৌদির কাছে তহবিল চাওয়া হবে- এমন ইঙ্গিত মিলছে বিভিন্ন সূত্রে।

একইসঙ্গে লিখিত আলোচ্য সূচিতে থাকা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি আলোচনা হবে। এছাড়া বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইস্যু।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমতে শুরু করে। গত মে মাসে দেশের রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসার খবর চাউর হয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করেছে, রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে এবং রিজার্ভ সংকট কাটাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দাবি করলেও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের তথ্য উঠে আসে। সম্প্রতি আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি মার্কিন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি বা ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার রিয়াদে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে বসবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ওই সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা, সৌদি যুবরাজের প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর, জনশক্তি রপ্তানি, বেসরকারি খাতে ব্যবসা বাড়ানো, সৌদি উন্নয়ন তহবিলের (এসএফডি) মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা, যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশ ইউরিয়া ও ডিএপি সার কারখানা স্থাপন, বাংলাদেশের পেট্রো-ক্যামিকেল ও পর্যটনে সৌদি বিনিয়োগের উদ্যোগ ও প্রস্তাবিত বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলোতে আলোচনা হবে।

দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুও উঠে আসবে আলোচনার টেবিলে। এগুলোর মধ্যে, ফিলিস্তিন সংকট, মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি, ইয়েমেন পরিস্থিতি, পবিত্র মক্কা-মদিনাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হুতিদের হামলা, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে, জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে একে অপরকে সমর্থনের বিষয়টি আসতে পারে আলোচনায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। সৌদি যুবরাজের প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা হবে। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু বেশ গুরত্ব পাবে। এক্ষেত্রে গাজা ইস্যু বেশি ফোকাসে থাকবে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু আমরা তুলব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা হবে। দুই দেশ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন বা অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, রিয়াদে রাজনৈতিক সংলাপে যোগ দিতে রোববার (৩০ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নেতৃত্ব ঢাকা ছাড়বেন প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও পরিচালক শফিকুর রহমান ও নাফিসা মনসুরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রয়েছেন।

এনআই/এসকেডি