মাঝ আকাশে ককপিটের জানালার কাঁচ ফেটে যাওয়ায় জরুরি অবতরণ, এছাড়া উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে দরজা ঠিক মতো বন্ধ না হওয়া। সম্প্রতি এমনসব ত্রুটি ধরা পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অন্তত তিনটি উড়োজাহাজে। বিমান তিনটিই মার্কিন কোম্পানি বোয়িং-এর নির্মাণ করা। 

এদিকে বিমানের ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটেছে, যখন বিশ্বজুড়ে এয়ারক্র্যাফট নির্মাতা সংস্থা বোয়িং বিমানের বিভিন্ন ত্রুটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। 

এক নজরে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ

» ২৬ জুন বিমানের একটি ফ্লাইট বোয়িং ৭৩৭-৮০০ হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের জন্য রানওয়েতে ওঠার পর পাইলট দুটি দরজা আন-লকড দেখতে পান। পরে এটিকে হ্যাঙ্গারে ফিরিয়ে নিয়ে ত্রুটি ঠিক করা হয়। পরে পুনরায় ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কাতারের দোহা রুটে রওনা দেয়।

» ২৫ জুন চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির উদ্দেশে যাত্রা করে ঢাকার বিমানবন্দরে অবতরণ করে একটি ফ্লাইট। উইন্ড-শিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ার পর জরুরি অবতরণ করে এটি। বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন এই এয়ারক্র্যাফটটিও বোয়িং-এর।

» ১৪ মে ভোর ৪টার দিকে ঢাকা থেকে টরন্টোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট। বিমানটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যাত্রা বিরতি করে পুনরায় জ্বালানি নিয়ে টরন্টোর উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের লখনৌর আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে পাইলট দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

» ২১ জানুয়ারি উইন্ড-শিল্ডে ফাটল দেখা দেওয়ায় সৌদি আরবের দাম্মাম অভিমুখে উড়াল দেওয়া একটি ফ্লাইটও ফিরে আনতে হয় ঢাকায়। উড্ডয়নের দুই ঘণ্টা পর সেটি শাহজালাল বিমানবন্দরে ফিরে আসে।

বোয়িং নিয়ে বিমানে দুশ্চিন্তা বাড়ছে? 

সাম্প্রতিক ত্রুটির ঘটনাগুলোর সবগুলোই হয়েছে বোয়িং-এর এয়ারক্র্যাফটে। বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থার বহরে থাকা ২১টি বিমানের মধ্যে ১৬টি বোয়িং-এর। এর মধ্যে বোয়িং ৭৩৭ সিরিজের ৮০০ মডেলের ছয়টি, ৭৭৭ সিরিজের ৩০০– ই আর চারটি এবং ৭৮৭ সিরিজের ছয়টি এয়ারক্র্যাফট। এসব বিমানের কয়েকটি ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই বোয়িং নিয়ে বিমানে দুশ্চিন্তা এখন বাস্তব।  

বিমান তৈরির সময় ত্রুটি কিংবা রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতার কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এভিয়েশন খাত পর্যবেক্ষক কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এয়ারক্রাফট ডিজাইনিং বা ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে কোনো ত্রুটি থাকলে তা ১০ বছর পরও বেরিয়ে আসতে পারে। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশে একই রকম ঘটনা যেহেতু ঘটেছে, এটি ম্যানুফাকচারিং ত্রুটির কারণেও হতে পারে। এর পাশাপাশি মেইনটেন্যান্সের ঘাটতিও কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, মেইনটেন্যান্সের সঙ্গে জড়িত ইঞ্জিনিয়াররা আরেকটু সতর্ক হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।

বিমান দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন (অব.) সালাউদ্দিন রহমতুল্লাহ বলেন, এসব ত্রুটিতে বিপদের ঝুঁকি খুব একটা বেশি নয়। তবে যাত্রীবাহী বিমানে ঘন ঘন এ ধরণের ঘটনা কাম্য নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পেছনে নির্মাণ ত্রুটির চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণের উদাসীনতার সম্ভাবনাই বেশি।

তিনি বলেন, প্রাইভেট এয়ারলাইন্স অনেক নজরদারিতে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিমানের কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি দেখা যায়। যে কারণে হয়তো মেইনটেন্যান্সটা ঠিক মতো হয় না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১২০ দিন পরপর এয়ারক্র্যাফটগুলোর মেইনটেন্যান্স করা হয়। সর্বশেষ মেইনটেন্যান্স-এর পর ১২০ দিন পার হওয়ার আগেই এবার উইন্ড-শিল্ডে ফাটলের ঘটনাটি ঘটেছে। 

এদিকে বোয়িং-এর সবচেয়ে বিতর্কিত মডেল ৭৩৭ ম্যাক্সের কোনো উড়োজাহাজ বিমানের বহরে না থাকায় দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে দাবি করেছেন বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম।

বোসরা ইসলাম বলেন, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। বোয়িং এর সঙ্গে পরামর্শ করেই আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা খতিয়ে দেখছেন। মেইনটেন্যান্সের কাজও তাদের পরামর্শেই করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাত্র ২১টা এয়ারক্রাফট। কিন্তু ফ্লাই করে অনেক বেশি। যে পরিমাণ আমাদের ক্যাপাসিটি তার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়। এর মধ্য দিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। 

এমএসএ