খেলনার দোকান থেকে বিটকয়েন ব্যবসা : লাখ লাখ ডলারের মালিক সুমন
শুরুটা ছিল ২০১৩ সালে। ছোট্ট একটি দোকানে কম্পিউটার বসিয়ে বাচ্চাদের কাপড় ও খেলনার ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকে আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন বেসিক বিজ মার্কেটিং নামক প্রতিষ্ঠান। আউটসোর্সিং মার্কেটিংয়ের ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই চলছিল অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসা। বাংলাদেশে অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার মূলহোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনের রয়েছে একাধিক ভার্চুয়াল ওয়ালেট। যেখানে মজুদ রয়েছে বিটকয়েনে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার। শুধু তাই নয়, বিটকয়েন ব্যবসার মাধ্যমে তিনি গড়েছেন ফ্ল্যাট, প্লট, সুপারশপসহ নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
রোববার (২ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বেসিক বিজ মার্কেটিং নামের প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১-এর একটি দল। সেখান থেকে বাংলাদেশে অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার মূলহোতা ও অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনসহ ১২ জনকে আটক করে র্যাব।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : বিটকয়েন কী
আটক হওয়া অন্যরা হলেন- আবুল বাশার রুবেল (২৮), আরমান পিয়াস (৩১), রায়হান আলম সিদ্দিকি (২৮), মো. জোবায়ের (১৮), মেহেদী হাসান রাহাত (২৪), মেহেদী হাসান (১৯), রাকিবুল হাসান (২৩) রাকিবুল ইসলাম (২২), সোলাইমান ইসলাম (২১), মো. জাকারিয়া (১৮), আরাফাত হোসেন (২২)।
অভিযান পরিচালনাকালে তাদের কাছ থেকে ২৯টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৩টি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন, ১টি ট্যাব ও বিবিধ নথিপত্র জব্দ করা হয়।
সোমবার (৩ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, চক্রটির মূল হোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমন। সুমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন। ২০১৩ সালে ছোট্ট একটি দোকানে বাচ্চাদের খেলনা ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।
সেখান থেকেই তিনি শুরু করেন বিটকয়েনের ব্যবসা। গড়ে তোলেন বেসিক বিজ মার্কেটিং নামক অনলাইন আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান। আর এর আড়ালে অবৈধ বিট কয়েন ও অনলাইন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন।
ওই ব্যবসার স্বত্বাধিকারী ও মূলহোতা সুমনের শুরুতে একটি ছোট অফিস ছিল। সেটি দিনে দিনে বড় হয়। িএখন বাড্ডায় ৩টি ফ্লোরে ৩২ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি ৩টি শিফটে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে।
ভার্চুয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে অবৈধ ও প্রতারণামূলক ব্যবসা বিটকয়েনের মাধ্যমে সুমন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ঢাকায় রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট, ১টি প্লট ও ১টি সুপারশপ।
এক বছরে ১৫ লক্ষাধিক ডলার ভার্চুয়াল ওয়ালেটে লেনদেন
সুমনের রয়েছে একাধিক ভার্চুয়াল ওয়ালেট। যেখানে বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার মজুদ রয়েছে। গত এক বছরে তিনি বিটকয়েনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছেন।
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত সুমন
আটক হওয়া ইসমাইল হোসেন সুমন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ই-মার্কেটিং সাইটে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রদান করতেন। পরবর্তীতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। কেউ যদি তার পণ্য ক্রয় করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করত তা তিনি হ্যাক করতেন এবং টাকা আত্মসাৎ করতেন।
বিটকয়েনে আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ গণমাধ্যম মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে বিটকয়েন নিষিদ্ধ। তবে বেশকিছু দেশেই বিটকয়েন বৈধ। সম্প্রতি ভারতে এটা বৈধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও বৈধ। এসব দেশের সঙ্গে লেনদেন রয়েছে বা দেশীয় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কাছে বিটকয়েন লেনদেন ও বিক্রি করতেন সুমন।
র্যাবের হাতে আটক অপর ১১ জন সুমনের প্রতারণা, জালিয়াতি ও অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও তার সহযোগী। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র্যাব।
জেইউ/এইচকে/জেএস