হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি করার তুলনায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে ‘নগর পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য : বৈশ্বিক এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক একটি সেমিনার বক্তারা এ কথা বলেন।

আলোচকরা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে নগর পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। নগর পরিকল্পনার উদ্ভব হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে অধিক শিল্পায়নের ফলে শহুরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অবাসযোগ্য বসতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ফলে সৃষ্ট মহামারি ও স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণে। নগর এলাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সংক্রামক রোগের বিস্তার হ্রাস করা, বাসযোগ্য স্বাস্থ্যকর জনবসতি গড়ার লক্ষ্যে নগর পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রগুলো পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে নগর পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ ক্রমশ আলগা হতে থাকে এবং নগর পরিকল্পনা ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করে।

তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে করোনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে নগর পরিকল্পনা ও আমাদের নির্মিত পরিবেশের সম্পর্ককে পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। জনস্বাস্থ্য কেবল স্বাস্থ্যগত বিষয় কিংবা স্বাস্থ্য অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয় নয়, তার সঙ্গে আমাদের শহরের সার্বিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ঢেলে সাজাতে হবে।

বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি করার তুলনায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ কমানো সম্ভব। নগর পরিকল্পনা যত বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে মানুষকে দূরে নিয়ে যাবে, মানুষের স্বাস্থ্য ততটাই ক্ষতির সম্মুখীন হতে বাধ্য। অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ক্ষতিকর প্রভাব নীতি নির্ধারকের সামনে উপস্থাপন করলে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ততটাই সহজতর হবে।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে নগর পরিকল্পনার সম্পর্ক অনেক পুরোনো হলেও করোনা আসায় এই বিষয়টি নতুন করে আমাদের সামনে আসে। ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলস্বরূপ যে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তা প্রতিটি নাগরিক উপলব্ধি করতে সক্ষম।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর তুরিন চৌধুরী বলেন, সঠিকভাবে জনসেবার ব্যবস্থা করতে হলে মানুষের প্রয়োজন বুঝতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হলে মানুষের কাছে গিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য যে হেল্থ লিটারেসির প্রয়োজন, তার সম্পূর্ণ জ্ঞানের অভাবও আমাদের পরিকল্পনার সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের দূরত্বের কারণ।

অপর মূল প্রবন্ধে পরিকল্পনাবিদ এমরানুল হক বলেন, শহর অঞ্চলে বর্তমানে সঠিক কোনো পাবলিক স্বাস্থ্য কাঠামো নেই, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবা এখনো অপ্রতুল। সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখনো সুষম খাবারের অভাবে ভুগছেন, কমিউনিটি লিড ইনিশিয়েটিভ গ্রহণ করতে হবে, রিসার্চ ও এভিডেন্স বেস কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা, সবাইকে একইভাবে মূল্যায়ন করা এবং সবসময় সরকারের সঙ্গে নগর ও পাবলিক হেল্থ বিষয়ে অ্যাডভোকেসি করার বিষয়ে জোর দিতে হবে।

এএসএস/এসএসএইচ