২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার তীব্র সমালোচনা করেছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা মনে করেন, এ সুযোগ রাখার কারণে বৈধ করদাতাদের কর প্রদানে অনীহা তৈরি হবে।

সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। একজন করদাতা হিসেবে আমার ৩০ লাখ টাকা থাকলে ৩০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু যিনি গত বছর টাকা দেখাননি, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করে নিচ্ছেন। এতে করে সঠিক করদাতারা কর দিতে অনিচ্ছা পোষণ করবেন।

শনিবার (২২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপরে আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, সবচেয়ে ব্যয়বহুল হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। যেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা উপকরণের দাম আকাশচুম্বী। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভাষায়— শিক্ষা ও চিকিৎসা থাকা উচিত সরকারি খাতে। একে বেসরকারিকরণ করা হলে শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো গুণগত মানের পরিবর্তন হয় না। তখন সেটা হয়ে যায় একটা পণ্য। এখন পৃথিবীজুড়ে এটা পণ্য হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে আপনার টাকা আছে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে চিকিৎসা পাবেন না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য দেখার কিছু নেই।

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা উন্নতির জন্য চিকিৎসকদের বেতন-ভাতার পাশাপাশি গবেষণা, আবাসনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন প্রাণ গোপাল দত্ত। মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের কারণে নতুন প্রজন্ম প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, কোন একটা অ্যাপ তৈরি করে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ারগুলো নিষ্ক্রিয় করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। অথবা সেই মোবাইল টাওয়ার যাতে ফ্রিল্যান্সিং বা বিদেশি মুদ্রা অর্জনের বিকল্প পথ ছাড়া অন্যান্য কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার না হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুন নাহার বেগম বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকল। এ সুযোগ নিয়ে অনেক অপরাধী দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি দেশে কালো টাকা সাদা করতে পারবে। যা দেশের অর্থনীতির সংকট বাড়িয়ে দেবে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনার জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, কালো টাকা আমাদের মার্কেটে আছে। এ টাকা কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেই উপায় কেউ বাতলায় না, সমালোচনা করে। দেখলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমালোচনা করে বলছেন, এতে নাকি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু উনি বলেন না, ২০০৭ (২০০৬ হবে) সালে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ৫ শতাংশ কর দিয়ে ১ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৭১০ টাকা সাদা করেছেন। এটা বলেন না, এটা তাদের মনে থাকে না। এটা মনে রাখার জন্য বলব।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের উন্নয়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধী একটি কুচক্রীদের চক্রান্তে তিনি সপরিবারে নিহত হওয়ার পরে সে উন্নয়ন ধারা ব্যাহত হয়, সেটা তিনি শেষ করে যেতে পারেনি। কিন্তু তারই সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে দেশে আজ উন্নয়নের রোল মডেল, দেশের প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, আইসিটি সব খাতেই ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। স্বাক্ষরতার হার ২০০৬ সালে ৪৫ থেকে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬.৮ শতাংশ। তেমনি শিক্ষা খাতে নারীদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।

এসআর/এসকেডি