ঢাকায় ফিরতেই ভোগান্তি শুরু
চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকি। পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে কদিনের ছুটি মিলেছিল। আবার ফিরে আসতে হলো ঢাকায়। কিন্তু ঢাকার কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়া। আমার মতো পরিবারসহ অধিকাংশ যাত্রীই পড়েছেন বিপাকে। স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারিনি। ফেরাটাও স্বস্তির হলো না বৃষ্টির কারণে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন অনেকেই। তবে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে না ফিরতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। জয়পুরহাট থেকে হানিফ বাসে ঢাকায় ফেরা আব্দুর রহমানও তাদের একজন।
বিজ্ঞাপন
অধিকাংশ উত্তরবঙ্গের ঢাকাফেরত যাত্রী পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে যেসব যাত্রী ফিরেছেন।
শনিবার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর আন্ত:জেলা গাবতলী বাস টার্মিনালে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে আধভেজা হয়ে সিএনজি, রিকশা ও অন্য বাস ধরে গন্তব্যে ফিরতে দেখা যায় তাদের। বৃষ্টিতে রাস্তা ভেজা ও পানি জমে থাকায় বেশি ভোগান্তি দেখা দেয় লাগেজ ও আনা প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়েও।
রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, পর্বতা সিগন্যাল, মাজার রোড ও টেকনিক্যাল মোড় ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে দূরদূরান্ত থেকে ফিরছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের মানুষই বেশি ফিরছেন এই রুটে।
গাবতলীতে বাস টার্মিনালের বিপরীত ইনকামিং সড়ক ও ফুটপাতে দেখা যায় ঈদ ফেরত যাত্রীদের ভিড়।
ফাতেমা স্পেশাল বাসে ঢাকায় ফেরা এক নারী যাত্রী বলেন, ঈদে ফিরেছিলাম সন্তান নিয়ে। চাকরির কারণে দু-দিন আগেই ফিরেছেন স্বামী। বাচ্চাদের স্কুল খুলবে কাল থেকে। তাই আরও দু-দিন থাকার ইচ্ছে সত্ত্বেও ফিরতে হলো আজ। ঈদ আনন্দের সুখস্মৃতি নিয়ে ঢাকায় ফিরেই ভোগান্তিতে পড়েছি। বাস থেকে নেমেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কবলে পড়েছি। কাউন্টার থেকে দূরে রাস্তার উপর বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ায় বৃষ্টিতে কাকভেজা হলাম। গন্তব্য শ্যামলী, কিন্তু সিএনজিও মিলছে না। সন্তান আর লাগেজ নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
রংপুর থেকে পারফেক্ট পরিবহনে গাবতলী মাজার রোডে নেমেই ভাড়া করা মোটরসাইকেলে উঠতে দেখা যায় এক মধ্যবয়সী যাত্রীকে। কাঁধে ব্যাগ। মোটরসাইকেলে উঠতে উঠতে তিনি বলেন, এখন আর বাসায় ঢোকার সময় নাই। বউ বাচ্চা বাসায় ফিরবে, আমি সরাসরি অফিসে। ওদের জন্য পরিচিত সিএনজি আগেই ফোনে ফোনে ঠিক করে রেখেছিলাম।
দিনাজপুর থেকে নাবিল পরিবহনে নাবিল কাউন্টারের সামনে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে নামেন ইকবাল হোসেন। টোকেন নিয়ে ৩টা বড় লাগেজও বুঝে নেন। লাগেজে আম, কোরবানির মাংস, কাপড়চোপড়, সঙ্গে গ্রামের সবজিও। গন্তব্য কল্যাণপুর হলেও তার কাছে সিএনজি চালক ভাড়া হাঁকান ৩০০ টাকা।
ইকবাল বলেন, বৃষ্টি আবহাওয়া দেখে সিএনজি চালকরা বেশি ভাড়া চাইছে। এখানে রিক্সাও আসে না। রিকশা ধরতে গেলে আরও ভোগান্তি। যেতে হবে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত। একে তো লাগেজ নামাতেও কাঁদা, ফুটপাতেও কাঁদা। অনেকটা বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় ফিরতে হচ্ছে বাসায়।
গাবতলীতে নামা দূরদূরান্তের যাত্রীদের জন্য ভরসা ঢাকায় চলাচল করা ছোট বাসগুলো। সেসব বাসে গন্তব্যে ফিরতেও দেখা যায় ঈদ ফেরত যাত্রীদের।
তবে পরিবহন সংকট কিংবা ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগী হয়েছে এসআর, শ্যামলী ও নাবিল পরিবহন। ছোট ছোট বাসে করে দূরদূরান্ত থেকে বয়ে আনা যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যের নিকটেই।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ফিরতি পথে মহাসড়কে যানজট না থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নেই রাজধানীতে ফিরছেন ঈদ ফেরত যাত্রীরা। তবে বৃষ্টি হওয়ায় আকস্মিক ভোগান্তি পড়েছেন ফেরত যাত্রীরা।
এসআর পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার কর্মী রিপন বলেন, ফিরতি যাত্রার বাস টার্মিনালের বিপরীত সড়কে দাঁড়াচ্ছে। সেখানেই ঈদ ফেরত যাত্রীরা নামছেন। সকাল ৮টার পর টেকনিক্যাল পর্যন্তই বাস যাবার নিয়ম। বাধ্য হয়ে গাবতলী টেকনিক্যালে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হচ্ছে।
জেইউ/পিএইচ