২ দিন আগে অফিস খুললেও ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবীরা। আজ শুক্রবার ঢাকায় ফিরে আসাদের সংখ্যা একটু বেশি। বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে লঞ্চ ভর্তি করে মানুষ আসছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে।

ঢাকায় আসা যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়তি চাপ নেই সদরঘাটে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই লঞ্চ ভিড়ছে এবং নতুন করে ছেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণের কর্মস্থলে যোগ দিতে বা দেরিতে ঈদের ছুটি কাটাতে অনেককে ঢাকা ছেড়ে যেতেও দেখা গেছে।

শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরের পর থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সবগুলো লঞ্চ ডেকে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ভেড়ে। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়েও কিছু কিছু লঞ্চ ঢাকায় আসে।

দুপুরের পর থেকে গ্রিন লাইন-৩, পারাবত- ৯, ১০, ১২ ও ১৮, মানামী, কুয়াকাটা-২, কীর্তনখোলা- ২ ও ১০, সুরভী- ৮ ও ৯, অ্যাডভেঞ্চার-১ ও ৯, সুন্দরবন-১২ লঞ্চসহ মোট ১৫টি লঞ্চ টার্মিনালে এসে পৌঁছায়।

মানামি লঞ্চের চালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এবার ঈদের আগে যেমন যাত্রীর চাপ ছিল, পরে তেমন হচ্ছে না। যদিও আজ অনেকে ঢাকায় ফিরছেন। যাত্রীর সংখ্যা একটু বেশি আছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো. আল আমিন পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে ফিরেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, এমভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে লঞ্চে অনেক ভিড় ছিল। ঠিকভাবে ঢাকায় আসতে পেরেছি এটাই অনেক।

এদিকে ফিরতি যাত্রায় বরিশাল ও ভোলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে কিছু লঞ্চ। সেগুলোর কর্মীরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। একে একে যাত্রীরাও লঞ্চে উঠছেন। বেশ কয়েকটা লঞ্চের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেক ভর্তি বসে আছেন মানুষ। কেউ আবার কেবিন নিয়ে দরদাম করছেন।

বিকেল সাড়ে ৫টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এমভি ফারহান-৩ নামের লঞ্চ। লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন ওই লঞ্চের কর্মী আবুল হোসেন। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন থেকে বেশি লোক বাড়ি যাচ্ছে। যারা ঢাকায় ঈদ করেছে তাদের অনেকেই এখন গ্রামে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে মনপুরা, হাতিয়ার দিকে যাবে এমভি তাসরিফ। লঞ্চের কর্মী মাসুম বলেন, লঞ্চে এরই মধ্যে পাঁচ-ছয়শ মানুষ উঠেছে। আর কিছুক্ষণ পর লঞ্চ ছাড়বে। এর মধ্যে আরও মানুষ উঠবে।

ভোলার চরফ্যাশন ও বেতুয়া যাবে এমভি টিপু-১৩। লঞ্চটিতে গিয়ে দেখা যায়, ডেক ভর্তি মানুষ। ভোলাগামী যাত্রী সাদিক বলেন, কাপড়ের দোকানে কাজ করি। ঈদের আগের দিনও খোলা ছিল। তাই ভাবলাম ঈদ ঢাকায় করে যাই। তাড়াহুড়ো করে গিয়ে রাস্তায় ঈদ করার চেয়ে পরে যাওয়া ভালো। লঞ্চটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ডেকে বসে আছেন শত শত মানুষ।

হাতিয়ার যাত্রী সুজন মিয়া বলেন, আমাদের আত্মীয়স্বজন সবাই ঢাকায়। এজন্য ভিড় ঠেলে বাড়ি না গিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করেছি। এখন একটু স্বস্তিতে বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসি।

ডলার কোম্পানির ২৪টি লঞ্চের মালিক ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমাদের লঞ্চ আছে অনেক, কিন্তু সেই অনুযায়ী যাত্রী নেই। তাই লঞ্চ কম ছাড়ছে। যেগুলো ছাড়ছে সেগুলো ভরে ভরে যাচ্ছে। ঈদের পরও আমরা যাত্রীর চাপ আশা করেছিলাম। কিন্তু পাইনি।

লঞ্চ যাত্রা বেশ আরামদায়ক উল্লেখ করে যাত্রীদের নৌপথে যাতায়াতের অনুরোধ জানান তিনি।

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়ায় এবার আশা পেয়েছিলাম। এখন সে আশা আর দেখছি না। সামনের দিনগুলোতে কী হয় দেখা যাক।

বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ঈদের পর যাত্রীচাপ স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের নিয়মিত লঞ্চগুলোই চলাচল করছে। অতিরিক্ত কোনো লঞ্চের প্রয়োজন পড়ছে না। ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদরঘাট নৌপুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম বলেন, সদরঘাট এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি নৌ পুলিশ সার্বক্ষণিক ঘাট ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। যেকোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা তৎপর রয়েছি।

এনআর/পিএইচ