কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব সরকার দলের এমপির
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম)। যাতে এ আন্দোলন জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে না নিয়ে যায় সেটা অনুধাবন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের এ সেক্টর কমান্ডার। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগে কোটা প্রথা বহাল রাখতে উচ্চ আদালতের রায়কে ধন্যবাদ জানান সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এ আলোচনা করেন সরকার দলীয় এ দুই এমপি।
বিজ্ঞাপন
চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম এ প্রজন্মকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তারা আন্দোলন করছে, সেই ভাষা আমাদের বুঝতে হবে। সেটা অনুধাবন করে আমাদের সমঝোতার মাধ্যমে মিটমাট করতে হবে। যাতে এ আন্দোলনটা জনগণকে আমাদের পক্ষ থেকে সরিয়ে নিয়ে না যায়। কারণ এ প্রজন্মের কাছে একদিন আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব।
আরও পড়ুন
বিদেশি ঋণ না নিতে পারলে আগামী অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন চাঁদপুর-৫ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম। বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘাটতি বাজেট পূরণে ঋণ নিতে না পারলে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। অতীতেও আমরা ঘাটতি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছি।
কাজের গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন সঠিকভাবে না হলে তা ধরে রাখতে পারব না। এখানে অনেক অভিযোগ আছে। যারা ঠিকাদার আছেন তাদের কাজের মান অত্যন্ত খারাপ। গ্রামাঞ্চলে মানুষ দেখে ঠিকাদাররা কাজ নিয়ে দুই-তিন বছর ফেলে রাখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ এত নিম্নমানের যে একবছর যেতে না যেতে পলেস্তার খুলে পড়ে, সেখানে রড দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা এসব দেখে আমাদের নিয়ে কী ভাববেন? আমরা সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি হয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের সন্তানরা দেখছেন ঠিকাদারদের কাজের মান খারাপ কিন্তু আমরা সেটা বন্ধ করতে পারছি না। সরকারের যে সম্পদ আছে তার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অপচয় হয় বলেও উল্লেখ করেন রফিকুল ইসলাম। ঠিকাদারদের অবহেলার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষের ৪০ ভাগ দারিদ্রসীমার নিচে ছিল। সেটা হলো তিন কোটির মতো মানুষ। আজকে ১৭ কোটি মানুষের ২০ ভাগ, সংখ্যায় কিন্তু সমান দাঁড়াচ্ছে। ওই তিন কোটি মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এ মানুষগুলো দুইবেলা খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বাঁচছে। তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এনে তাদের দুইবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কৃষি জমির মাটি ইটভাটায় লাগামহীনভাবে ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে হারে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, এইভাবে যদি আর দুই-তিনবছর চলে, আর জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান। এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল তা বহাল রাখার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। তা পুনরায় চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ভাতা ১০ হাজার ও সদস্যদের ভাতা ৮ হাজার করার প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের এমপি শাজাহান খান। গার্মেন্টস, পরিবহন শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং প্রথা চালুর প্রস্তাব করেন তিনি।
বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, তারা কি দেখে নাই তাদের দলে ঘুণে ধরেছে। এ দলকে রক্ষার জন্য আপনারা কি করবেন সেটা ভাবেন। শেখ হাসিনাকে উৎখাতের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের কথা ভাবুন। আপনারা কীভাবে রাজনীতিতে টিকে থাকবেন সেই কথাটা ভাবুন।
এসআর/এমজে