উপরে বাঁ থেকে মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মোস্তফা কামাল, মো. মোকাব্বির হোসেন, জাকিয়া সুলতানা, সালাহ উদ্দিন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

চলতি বছর মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষ এ দুই পদে কারা আসছেন তা নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে এবার জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করেই নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে।

জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এসব পদে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন শেষ পর্যন্ত সেই কর্মকর্তাই নিয়োগ পাবেন। বর্তমানে যারা এসব পদে কর্মরত রয়েছেন তাদের কারো চুক্তির মেয়াদ আবারও বাড়ানো হলে অবাক করার কিছু থাকবে না। কারণ তারা সবাই যোগ্য।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি এ পদে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে ওই বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অবসর দিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপনও জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। নবম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন এবং মাঠ প্রশাসনের সকল স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

এরপর পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে এ পদে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগের কথা জানানো হয়। সে অনুযায়ী আগামী ১৪ অক্টোবর চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে মো. মাহবুব হোসেনের।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে ২০২৩ সালের ৪ জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের ২৫ জুন তার অবসরোত্তর ছুটি ও এ–সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে ৫ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী ৫ জুলাই অবসরে যাওয়ার কথা তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার।

খালি হতে যাওয়া প্রশাসনের শীর্ষ এ দুই পদে কারা আসছেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব দুজনই যেহেতু চুক্তিতে নিয়োজিত, তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে গুঞ্জন রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসব পদে আসতে পারেন নতুনরা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন, দশম ব্যাচের কর্মকর্তা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)-এর চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মো. মোকাব্বির হোসেনও।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব-দুটি পদই প্রশাসনের শীর্ষ পদ। সাধারণত জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করেই এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় এর ব্যতিক্রম হয়।

তিনি আরও বলেন, এবারও জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করে দুই পদে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। নবম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন এবং মাঠ প্রশাসনের সকল স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

কর্মজীবনে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসাবে এ বিভাগের মর্যাদাপূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ ও রিপোর্টিং অনুবিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

সবকিছু মিলিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। এ পদে দায়িত্ব না পেলেও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।

প্রশাসনের শীর্ষ এ দুই পদে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করলে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর পরেই নবম ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের অবস্থান। তিনিও এ দুই পদের যেকোনো একটিতে নিয়োগ পেতে পারেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন, দশম ব্যাচের কর্মকর্তা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)-এর চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মো. মোকাব্বির হোসেনও।

জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণে এগিয়ে থাকা আরেক কর্মকর্তা হলেন বেগম জাকিয়া সুলতানা। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সালাহ উদ্দিনও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে মুখ্য সচিব হিসেবে তার নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করলে এক্ষেত্রে এ পদে অসীন হওয়ার তার কোনো সম্ভাবনা নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব পদে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনিই যোগ্যদের বাছাই করবেন। দুই পদে বর্তমানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কারো চুক্তির মেয়াদ আবারও বাড়ানো হলে অবাক করার কিছু থাকবে না। কারণ তারাও অনেক অভিজ্ঞ।

এসএইচআর/এসকেডি