আলিশান বাড়ির গেটের সামনে জনা পঞ্চাশেক মানুষের ভিড়। সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে গেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ভেতরের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারো পায়ে স্যান্ডেল আবার করো পা খালি। তবে সবার হাতেই পলিথিন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ। ভিড়ের কারণে সরু রাস্তাও বন্ধ। তবুও কেউ সরছেন না৷ কারণ সরে গেলেই পেছনে পড়ে যেতে হতে পারে।

কথা বলে জানা গেলো — এই অপেক্ষা একটুকরো মাংসের জন্য। গেটের সামনে থাকলে নিশ্চিন্তে আগেভাগেই বিতরণ করা মাংস পাওয়া যাবে আর পেছনে সরে গেলে মাংস পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এমন শঙ্কায় কেউ জায়গা ছাড়ছেন না।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) কোরবানির ঈদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকার একটি আবাসিক ভবনের সামনে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, এই বাড়ির এক ব্যক্তি ঈদের প্রথম দিন নিজের পরিবারের জন্য এবং দ্বিতীয় দিন গরিব, অসহায় এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আরও একটি গরু কোরবানি করেন। এই গরুর মাংস পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া হয় অসহায় এবং দুস্থদের মাঝে। বিষয়টি আগে থেকেই অনেকে জানেন। সেজন্য এলাকার আশপাশের বিভিন্ন জায়গার নিম্ন আয়ের মানুষ কোরবানির দ্বিতীয় দিনে এখানে ভিড় করেন। দুপুরে কোরবানি করা গরু প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে বলেও জানানো হয়।

অপরদিকে মাংসের জন্য ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অপেক্ষমাণদের মধ্যে অধিকাংশরাই ছিলেন নারী।

হামিদা বেগম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, কোরবানির ঈদের সময় সবাই ২-৩ দিন প্রতিবেলায় গরুর মাংস দিয়ে ভাত খায়। আমরা তো কোরবানি দিতে পারিনি। সেজন্য একটু মাংসের জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। গতকালও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মাংস তুলেছি। একটু বেশি মাংস হলে কয়েকদিন নিশ্চিন্তে খাবার খেতে পারি।

জরিনা নামে আরেকজন বলেন, সবজায়গায় এক-দুই টুকরা করে মাংস দেয়। এখানে পরিমাণে একটু বেশি পাওয়া যায়। আস্ত গরুই গরিবদের ভাগ করে দেওয়া হয়। সেজন্যই এই বাসার সামনে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মানুষের ভিড় বেশি। পেছনে পড়ে গেলে মাংস পাই কি না সেই চিন্তায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি।

অপরদিকে, ঈদের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষজনকে কোরবানি দিতে দেখা গেছে। প্রথম দিন কসাই না পাওয়া, জায়গার সংকটসহ নানান কারণে যারা কোরবানি করতে পারেননি তারাই আজ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে ফরজ ইবাদত পালন করেছেন। এছাড়া এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারাদেশে কোরবানি দেওয়া গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২ টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। গত বছরের তুলনায় এবার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬ টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জনসংযোগ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

আরএইচটি/এসকেডি