রাতে পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় জমজমাট রাজধানীর পশুর হাট। গতকাল শনিবার ও আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত পর্যাপ্ত পশু বিক্রি হওয়ায় শেষ সময়ে হাট প্রায় গরু শূন্য। এরপর আজ (রোববার) দুপুরের পর নতুন করে ট্রাকে করে হাটে পশু আনা হয়েছে। কিন্তু বিকেলে আবার হাটে ক্রেতা কমে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েন গরু ব্যবসায়ীরা। তবে, সন্ধ্যার পর শেষ সময়ের এসে ক্রেতা বাড়ায় সন্তুষ্ট তারা। এদিকে, শেষ সময়ে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

রোববার (১৬ জুন) সন্ধ্যার পর রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আজ গাবতলী হাটের প্রবেশপথে ক্রেতাদের ঢল দেখা গেছে। পছন্দের গরু কোরবানি দেওয়ার জন্য সবাই গরু খুঁজছেন। কিন্তু বাজেটের মধ্যে মিলছে না গরু।

তাদের মধ্যে একজন পল্লবীর ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে গরুর দাম কম হবে, এমন চিন্তায় গতকাল গরু কিনিনি। আজ তো হাটে গরুই নেই। যে কয়টা আছে দাম অনেক। কয়েকটি হাট ঘুরে এখানে এসেছি। এবার গরুর সরবরাহ কম দাম বেশি।

গরু ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর কয়েকটি হাটে গরুর সংকট দেখা গেছে। এই জন্য গাবতলীর হাটে বেড়েছে ক্রেতা। এই সুযোগে অনেকে ভালো দামে গরু বেচাকেনা করেছেন। এখানেও পর্যাপ্ত গরু নেই। 

তারা বলছেন, আলহামদুলিল্লাহ, এবার ভালো ব্যবসা হয়েছে। গত দুই বছর লোকসান হলেও এবার ভালো বেচাকেনা হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর প্রায় পশু শূন্য গেছে পুরো হাট। এ ‍সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ইজারাদাররা বলছেন, হাটে যে পরিমাণ ক্রেতা আছে, সেই পরিমাণে গরু নেই।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্র, শনি এবং আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। এতে হাটে গরু কমে যায়। গত দুই দিন সামান্য লাভ করে গরু ছাড়লেও শেষ সময়ে বেশি লাভ করবেন, এমন আশায় ঢাকার বাইরে এবং ঢাকার অন্যান্য হাট থেকে গরু আনেন তারা। কিন্তু বিকেল ৪টার পর হাটে মানুষজন কমে যায়। তবে, সন্ধ্যার পর আবারও ক্রেতা বেড়েছে। এখন প্রচুর ক্রেতা হাটে এসেছেন। তবে, গরু কম থাকায় সবাই কিনতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইজারাদাররা।

গাবতলী পশুর হাটে আজ বিকেলে নতুন করে ১৫টি গরু এনেছেন কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী বাচ্চু শেখ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দুই দিনে ২৫টি গরু বিক্রি করেছি। আজ দুপুরের মধ্যে সব গরু বিক্রি করার পর সাভার এবং উত্তরা দিয়াবাড়ী হাট থেকে আরও নতুন করে ১৫টি গরু এনেছি। আশা ছিল সন্ধ্যা পর থেকে কাস্টমার বাড়বে এবং একটু বাড়তি লাভে বিক্রি করব।

শেষ সময়ে এই গরুগুলো দিয়ে বাড়তি লাভ করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই গরুগুলো বেশি দামে কিনেছি। তাই একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

দিন শেষে লাভের পাল্লাই ভারি বলে জানান ব্যাপারী-খামারিরা। তবে, দাম কমে যাবে, এমন আশায় এখনও হাটে হাটে ঘুরছেন অনেক ক্রেতা। কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে, পশুর দাম ততই বাড়ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি গরুর দাম বাড়ছে।

জানা গেছে, বড় গরু আগে থেকেই কম বিক্রি হচ্ছে। আজ একই চিত্র দেখা গেছে হাটে। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বিভিন্ন আকারের গরু আনা হয়েছে। মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর চাহিদা কম।

বিক্রেতারা জানান, গত তিন বছরের ন্যায় এবারও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু। শুরু থেকেই চাহিদা কম ছিল বড় আকারের গরুর।

কোরবানির পশুর হাটে আসা ব্যাপারী মনজিল মিয়া বলেন, বড় ও মাঝারি ৩০টি গরু আনলেও মাঝারি সাইজের সবগুলো বিক্রি করেছি। এখনও গলার কাটা ছয়টি বড় গরু। খরচের টাকা উঠলেই ছেড়ে দেব। 

তার দাবি, বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রত্যাশা অনুসারে বেচাবিক্রি না হওয়ায় সামান্য লাভে গরু ছেড়ে দিতে হয়েছে। শেষ সময়ে এসে গরুর দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় শুরু থেকেই কম লাভে গরু বিক্রি করেছেন। এরপর গতকাল রাতেই হাটের সব গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ায় দুপুরে নতুন করে পশু আনা হয়েছে। এখন গরুর দাম বেশি। কিন্তু বড় গরু ক্রেতা এখনও কম।

হাটে বেচাবিক্রি শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী জমির। তিনি বলেন, ঈদের দুই দিন ভালো বাজার গেছে। এবার লাভ হয়েছে, আমরাও খুশি।

অনেক ব্যাপারী গরু বেচাকেনা করে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছেন দলবেঁধে। সবার চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। তাদের মধ্যে একজন পাবনার ছন্দু ব্যাপারী। তিনি বলেন, এবার আমরা খুশি। ভালো ব্যবসা হয়েছে। অন্যান্য বছর গরু থাকায় বাড়িতে যেতে পারিনি। এবার বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে আনন্দ করে ঈদ করব।

এদিকে, ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। শেষ সময়ে ব্যবসায়ীরা গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

লালবাগের শহীদনগর থেকে গরু কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুধু গতকাল নয়, গতবারের চেয়ে এখন গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন ব্যাপারীরা। গতকাল যে গরু এক লাখ ৩০ হাজার টাকার কিনেছে, সেটি আজকে ১ লাখ ৪০ হাজার বলার পরও দিচ্ছে না।

এনএম/কেএ