চুয়াডাঙ্গা থেকে ১১টি গরু নিয়ে চারদিন আগে রাজধানীর মেরাদিয়া হাটে এসেছেন বিক্রেতা হাফিজুর রহমান। প্রায় একই সাইজের প্রতিটি গরু ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা থাকলেও ৪টি গরুই বিক্রি করতে হয়েছে দেড় লাখ টাকার নিচে। তাই ভীষণ হতাশ তিনি।

শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর মেরাদিয়া পশুর হাটে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপ হয় হাফিজুরের। তিনি বলেন, আমার প্রতিটি গরু কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না৷ ১১টি গরুর চারটি বিক্রি করেছি দেড় লাখের নিচে৷ বাকি ৭ টি গরু নিয়েও ঝামেলায় আছি৷ একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় ঢাকা এনেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি কপাল পুড়ছে আমার। এতগুলো গরু বাড়ি ফেরত নিতেও খরচ অনেক৷ এতদিনের কষ্টও বৃথা৷ তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এগুলো বিক্রি করেই গ্রামে ফেরার।

বেশিরভাগ বিক্রেতার অভিযোগ, তারা কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না। দাম চাইলেই সটকে পড়ছেন ক্রেতা৷ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সমন্বয়হীনতার এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পশু বাজারে আসাকেই সমস্যার চোখে দেখছেন তারা। এদিকে হাট ঘুরে বিক্রেতাদের তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসায় দাম একটু কমছে। ফলে ব্যাপারীরা গরু বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। অপরদিকে বাজারে অতিরিক্ত দাম দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের৷

দাম বেশি চাইলেই সটকে পড়েন ক্রেতারা

সরেজমিন দেখা গেছে, বিক্রেতারা গরুর দাম একটু বাড়িয়ে বললেই সটকে পড়ছেন ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা আবার অপ্রাসঙ্গিক দাম বলেই চলে যাচ্ছেন। আবার দামে বনিবনা হলে হাট ঘুরে দেখে আশ্বস্ত হলে পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।

গরু বিক্রেতা সাইদুর বলেন, এক ক্রেতার কাছে দেড় থেকে পৌনে দুই মণ ওজনের একটি গরুর দাম চেয়েছিলাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ক্রেতার দাম পছন্দ হয়নি বলে কিছু না বলেই চলে গেছেন।

সিরাজগঞ্জ থেকে ৮টি গরু নিয়ে এসেছেন খামারি বেলাল মিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির দাম চেয়েছেন তিনি ৫ লাখ টাকা। ক্রেতারা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম বলেছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এ নিয়ে বেলালের একটু মন খারাপ।

তিনি বলেন, গরুর ন্যায্য দাম কেউ বলছে না৷ যে কারণে বিক্রি করতে পারছি না৷ এখনো যেহেতু সময় আছে সেহেতু দেখি কী হয়৷

কেমন দামে বিক্রি হচ্ছে গরু?  

মেরাদিয়া পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট সাইজের প্রতিটি গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে দরদাম শেষে সাইজ ও মানভেদে এসব গরু বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। ক্ষেত্রবিশেষ এই দাম ১ লাখের বেশিও হচ্ছে৷ মাঝারি সাইজের প্রতিটি গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা তবে দরদাম শেষে মানভেদে এসব গরু বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। অপরদিকে সাইজ ও মানভেদে প্রতিটি বড় গরু ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা হাঁকানো হলেও ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ 

বেশি চাহিদা মাঝারি সাইজের গরুর

বাজারে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ ক্ষেত্র বিশেষ কেউ কেউ বড় গরুও কিনছেন৷ 

বাসাবো পাটোয়ারী গলি থেকে গরু কিনতে আসা কামরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতি বছর মাঝারি সাইজের একটা গরু কোরবানি দেই৷ বাজারে এই সাইজের গরুর অভাব নেই৷ দাম সমন্বয় হলেই একটা নিয়ে যাবো৷ শেষ দিকে এসে দাম ছাড়বে বিক্রেতারা৷ তাই এত তাড়াহুড়ো করার কিছুই নেই৷

খিলগাঁও থেকে গরু কিনতে আসা আরেক ক্রেতা সেলিম আহমেদ বলেন, গরু দেখতে এসেছি৷ আগামীকাল কিনব৷ এতো আগে গরু কিনে নিয়ে গেলে ঝামেলা বাড়ে৷ তাছাড়া দেখার লোকেরও প্রয়োজন হয়৷ শেষ দিকে পশুর দামও কমে৷ 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি।  

এ বছর মেরাদিয়া গরুর হাটের ইজারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবু সাইদ৷ মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় এই হাটের সরকারি দাম ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৩৪ টাকা। ইজারা ৩ কোটি ৭১ লাখ ১ হাজার ১০০ টাকা। 

হাটের আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ বছর অনেক বেশি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিতে হচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী হাসিলের রেট বাড়ানো যাচ্ছে না। এ বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে হাটে। গরু-ছাগলের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া পাইকারদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

এমএম/এসকেডি