ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তাই রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। যাত্রীদের এমন ভিড় দেখা যায় রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালেও। তবে টার্মিনালে যাত্রী থাকলেও অধিকাংশ বাসের কাউন্টারে নেই টিকিট। আবার কিছু কিছু পরিবহনের টিকিট থাকলেও সংকট বাসের। সবমিলিয়ে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলগামী নিরালা সুপার পরিবহনের টিকিটের জন্য যাত্রীরা ৩-৪ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট থাকলেও পর্যাপ্ত বাস না থাকায় কাউন্টার থেকে যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। ফলে যাত্রীরা ৩-৪ ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অতিষ্ঠ।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাস ঠিকই রয়েছে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর জন্য কাউন্টার কর্তৃপক্ষ বাসের সংকটের অজুহাত দিচ্ছে।

টাঙ্গাইলগামী যাত্রী মোহাম্মদ আমির নিরালা বাসের টিকিটের জন্য তিন ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাস আসছে না, কাউন্টার থেকে আমাদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ভাড়া ২৫০ টাকা। এখন এ ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছে নিরালা সুপার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে নিরালা সুপার সার্ভিসের কাউন্টার ম্যানেজার সাজ্জাদ খান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত টিকিট রয়েছে ঠিকই। কিন্তু টাঙ্গাইলে যে কয়েকটি বাস গিয়েছে, সেগুলো এখনো ফিরে আসছে না। বাস ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা টিকিট দিতে পারছি না।

টিকিটের ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য বাসের সংকট দেখানো হচ্ছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীদের এই অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের বাস এখনো টার্মিনালে আসেনি, তাহলে আমরা টিকিট দেই কীভাবে? ভাড়া আগে ছিল ২৫০ টাকা করে, এই টাকায় টিকিট বিক্রি করা হবে।

মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে একাধিক কাউন্টারে দেখা যায়, এসব কাউন্টারে ঈদের আগের আর কোনো টিকিট নেই। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আজ যারা টিকিটের জন্য আসছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ।

এনা পরিবহনের রংপুরের টিকিট নিতে আসা যাত্রী মো. রুবেল মাহমুদকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। তিনি বলেন, বাসের অগ্রিম টিকিট কাটতে পারিনি। এ ছাড়া ট্রেনের অগ্রিম টিকিটও পাইনি। আজ এসেছিলাম মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট কাটতে। কিন্তু এনা পরিবহনের কর্তৃপক্ষ বলছেন তাদের কাছে কোনো টিকিট নেই। এখন কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে তাদের কাছে টিকিট রয়েছে, শেষ সময়ে এসব টিকিট তারা বাড়তি দামে বিক্রি করবে।

মহাখালী বাস টার্মিনালের এনা কাউন্টারের ম্যানেজার মো. তুষার বলেন, আমাদের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ঈদের আগে যাত্রার কোনো টিকিট আর বাকি নেই। এখন টিকিট না থাকলে যাত্রীদের কীভাবে টিকিট দেব।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একতা পরিবহনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে আরো তিন দিন আগে। তাই কাউন্টারে এসে খালি হাতে ফিরে যান যাত্রী মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, আগে এসে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারিনি। এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ভাড়ার তালিকা তারা আগের মতোই নিচ্ছে। কিন্তু কোনো টিকিট নাই বলে জানাচ্ছে। তবে কাউন্টারে আসা আরো দু-একজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, নির্ধারিত বাড়ার থেকে দুই থেকে তিনশ টাকা বাড়িয়ে দিলে টিকিট পাওয়া যাবে। এখন দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।

শুধু একতা কিংবা এনা পরিবহন নয়, সাহেব ফাতে আলী পরিবহন, ন্যাশনাল ট্রাভেল, দেশ ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে কোনো ধরনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

এমএসি/এমজে