পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুই দিন। এখনও জমে ওঠেনি রাজধানীর অনেক পশুর হাট। ধানমন্ডি-জিগাতলা লোগোয়া হাজারীবাগের হাট তার একটি।

সারা দেশ থেকে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে যেসব বিক্রেতা হাজারীবাগ হাটে এসেছেন, তারা যারপরনাই হতাশ। বসে বসে অলস সময় পার করছেন তারা। যদিও গরু বিক্রির ব্যাপারে এখনো যথেষ্ট আশাবাদী বিক্রেতারা। সবাই আশা করছেন, আজ শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেল থেকে বেচাকেনা জমে উঠবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ক্রেতার সামনে নজর কাড়তে গরুকে ধুয়ে-মুছে গোসল করিয়ে এবং খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।

শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসেছে এবারের হাট। হাজারীবাগের ট্যানারি মোড় থেকে কিছুটা সামনের দিকে এগোলে রাস্তার দুই পাশে দেখা যাবে অসংখ্য গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। ফুটপাতের ওপর অস্থায়ীভাবে বাসস্থান গড়েছেন গরুর সঙ্গে আসা পাইকার, বিক্রেতা ও রাখালরা। এর বিপরীত পাশে রয়েছে ছাগলের হাট। দুটি বাজারই অনেকাংশেই ফাঁকা, ক্রেতাশূন্য। গরু নিয়ে যারা এসেছেন তারাই ঘোরাফেরা করছেন। অনেক বিক্রেতা ও রাখাল ফুটপাতের ওপর শুয়েবসে অলস সময় পার করছেন। 

ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। আবার অনেকে বলছেন, ছুটির দিনের সকালে ঘুমিয়ে কিংবা বিশ্রাম নিয়ে সময় কাটান শহরের মানুষ। জুমার নামাজের পর থেকে বেচাবিক্রি শুরু হবে। তবে কিছুটা ভয় রয়েছে বৃষ্টি নিয়ে। গতকালের মতো একই সময়ে বৃষ্টি এলে গরু বেশি বিক্রি করা যাবে না। 

বিভিন্ন আকারের ও রঙের গরু এসেছে হাটে। প্রচুর বড় গরু এনেছেন বিক্রেতারা। তবে মাঝারি আকারের গরুর সংখ্যাটা বেশি। সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাতে দেখা গেছে ব্যাপারীদের। অপরদিকে খাসির দাম আকারভেদে সর্বনিম্ন ১০-১৫ হাজার, আর সর্বোচ্চ জাত ও আকারভেদে ৩০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে।

বিক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি হলেই ভাটা পড়বে গরু বিক্রিতে। বৃষ্টির মধ্যে পানি ও কাদা পেরিয়ে হাটের ভেতরের দিকে আসতে চান না ক্রেতারা।

কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা আব্দুর রহমান নামে এক বিক্রেতা বলেন, তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলাম গত পরশু। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। মানুষজন এখন হাটে আসতে উৎসাহবোধ করছেন না। আশপাশের অনেক ফার্ম থেকে গরু কিনে নিচ্ছেন তারা। যার প্রভাবেই এখানে ক্রেতার অভাব দেখা দিয়েছে। যারা আসছেন, তারাও ছোট গরুর দিকে নজর দিচ্ছেন। আমরা খুব নিরুপায় হয়ে পড়েছি। দুই-তিন বছর ধরে এই গরু বড় করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। কম দামে গরু বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। যে অবস্থা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে না লাভে গরু বিক্রি করতে পারব।

রাসেল নামে আরেক গরু বিক্রেতা বলেন, সকাল থেকে একজন ক্রেতাও আসেননি। আশা করি জুমার নামাজের পর থেকে আসবেন। সেই জন্য গরু ধুয়ে-মুছে, গোসল করিয়ে, খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করছি। মানিকগঞ্জ থেকে এই একটি গরুই নিয়ে এসেছি। ১৫-১৮ মণ ওজন হবে। দাম চাচ্ছি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত চার লাখের মতো দাম উঠেছে। এখন গরু লালনপালনে অনেক খরচ। কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে জানিয়ে আরেক বিক্রেতা বলেন, এমন অবস্থা হবে জানলে হাজারীবাগ হাটে গরু নিয়েই আসতাম না। বৃষ্টির পানি যাওয়ার জায়গা নেই। গতকালের বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। রাত পর্যন্ত গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এই হাটে অনেক অব্যবস্থাপনা। কোনোরকমে অল্প লাভেই গরু দুটি ছেড়ে দেব চিন্তা করছি।

বেশ কয়েকজন ক্রেতাকে দলবেঁধে হাটে ঘুরতে দেখা যায়। মরজিনা বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি একাই কোরবানি দিই। বড় গরুর প্রয়োজন হয় না। মাঝারি কিংবা ছোট সাইজের গরু হলেই চলবে। এখন ঘুরেফিরে দেখছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাব। ওরা (বিক্রেতারা) দাম অনেক বেশি বলছে। এখনো দাম হাতে রেখে চাইছে।

হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার সকাল হিসেবে ক্রেতার পরিমাণ কম। কিন্তু জুমার নামাজের পর ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়বে। তারপরও একবারেই যে কম বেচাকেনা, তেমনটি নয়।

হাটের ইজারাদার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. রাশেদ বলেন, একেবারেই বেচাকেনা হচ্ছে না বিষয়টি সত্য নয়। সকাল থেকে ১০০টির মতো গরু বিক্রি হয়েছে। এখানে যারা আসেন তারা তো নিয়মিত কেনাকাটা করেন না। তাই একটু সময় লাগে। জুমার নামাজের পর ক্রেতার পরিমাণ বাড়বে। আমরা সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে ক্রেতারা নির্ভয়ে এখানে কেনাকাটা করতে পারেন। পশুর ডাক্তারও রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ভালোই। আমরা আশা করি আগামী দুই দিনে আরও জমজমাট হবে বেচাকেনা।

আরএইচটি/কেএ