সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। একই দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর পরিবার পেয়েছেন দুই লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে মঞ্জুরি করা অর্থের চেক সংশ্লিষ্টদের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার সত্যপীরের মাজার গেট সংলগ্ন সড়কে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ঘটনাস্থলে মারা যান এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাওফিক হোসেন। এছাড়া গুরুতর আহত হন পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. জাকারিয়া হাসান হিমু।

চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, চুয়েটের দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সড়কে অকাল মৃত্যু আমরা কখনো কামনা করি না। এর পরেও দুর্ঘটনা থেমে নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় কারও অকাল মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর পরেও সরকার, জেলা প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন মেনে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। বাইক চালালে লাইসেন্স ও হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স ও ডকুমেন্টবিহীন গাড়ি চালানো যাবে না।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ছাত্রদের পক্ষ থেকে এ সড়ক প্রশস্তকরণ, নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর দাবি ছিল। আমরা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়টি জানিয়েছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে চুয়েটের সড়কটি প্রশস্ত করা হবে। নিহত দুই ছাত্র শান্ত সাহা ও তৌফিকুর রহমানের নামে এ সড়কের নামকরণ করার বিষয়ে নিহত ছাত্রদ্বয়ের অভিভাবকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে প্রস্তাবনা পাঠাবো। দুর্ঘটনায় যে দুজন ছাত্র মারা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নামে কোনো ভবন বা চত্বর নামকরণ করা যায় কি না জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপনসহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

অনুষ্ঠানে চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, দুই ছাত্র নিহত ও একজন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক বৈঠক করেন। এসময় আমাদের ছাত্ররা বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে। তিনি তাদের দাবিগুলো পূরণের অঙ্গীকার করেন। তিনি কথা রেখেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা মর্মাহত। যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। আমাদের দুই ছাত্র নিহত ও একজন ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যার কারণে পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূলে চলে আসে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

অনুষ্ঠানে ছেলের মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত ছাত্র শান্ত সাহার বাবা কাজল সাহা ও মৃত তাওফিক হোসেনের বাবা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন আহত ছাত্র মো. জাকারিয়া হাসান হিমু।

অনুষ্ঠানে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী এবং নিহত-আহত ছাত্রদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/এসএম