তিনদিন পরই ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী গাবতলী পশুর হাট। এবার শুরু থেকেই ছোট গরুতে নজর ক্রেতাদের। মাত্র ছয় হাজার টাকায়ও মিলছে কুরবানির খাসি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরজুড়েই গরুর বাড়তি দাম। খরচও বেড়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে হাটে। গত বছরও মাঝারি সাইজের গরুর বেচাকেনা বেশি ছিল। তবে এবার ক্রেতা মানেই নজর ছোট গরুতে। তবে খাসি ছোট-বড় সব সাইজেই বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটে সরেজমিন দেখা যায়, বিকেল হতেই ক্রেতা সমাগম বাড়তে শুরু করে। মূল হাট প্রাঙ্গণ ছাড়াও অস্থায়ী শেডেও ব্যাপারীরা গরু নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে কথা হয় মেহেরপুরের ব্যবসায়ী আতিয়ারের সঙ্গে।

গরু ব্যবসায়ী আতিয়ার বলেন, ‘এবার সব ছোট গরুর কালেকশন। শুরু থেকেই ক্রেতার আগ্রহ দেখছি ছোট গরুতে। ৩২টা গরু আনছি, আরও আনব। ইতোমধ্যে ১২টা বেচে দিছি। আজ অনেকে দেখে দাম-দর করে যাচ্ছেন। কাল তারাই কিনে নিয়ে যাবেন। কয়েকজন তো আগাম অর্ডার দিয়ে গেলেন।’

মানিকগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী মো. হোসেন বলেন, ‘সব এক সাইজের গরু আনছি। দাম সব ১ থেকে সোয়া লাখের মধ্যে। এই দাম ও সাইজের গরুর চাহিদা সবসময় বেশি। তিনদিন হলো এ হাটে আছি। আজ গরু বিক্রি বেশি হচ্ছে। দাম-দর বেশি হচ্ছে। কাল তো পুরোদমে জমবে হাট। আজই বেচে দিলাম ১৩টা। রাতে আরও গরু আসছে। এবার ছোট গরুতেই লাভ।’

তবে ক্রেতারা বলছেন, নজর যখন ছোট গরুতে বেশি, তখন দামও হাঁকানো হচ্ছে বেশি।

মিরপুর শাহ আলী এলাকা থেকে গাবতলী গরুর হাটে আসা ক্রেতা আকবর হোসেন বলেন, ‘তিনটা গরু কিনব। দুটো ছোট, একটা বড়। কিন্তু বড় গরুর যা দাম, ছোট দুই গরুর তাই দাম। সোয়া লাখের গরু হাঁকাচ্ছে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। গরু মিলবে, তবে একটু দাম-দরে থাকতে হবে।’

হাট ঘুরে দেখা যায়, বড় গরুর শোডাউন বেশি হলেও প্রচুর ছোট ও মাঝারি গরু উঠেছে। ৭০ হাজার থেকে দুই লাখ পর্যন্ত হাঁকানো হচ্ছে দাম। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকে পিকআপেও আসছে গরু।

ছোট গরু কিনে ফেরার পথে আফজাল শেখ নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘গত বছরের লাখ টাকার গরু এবার সোয়া লাখে কিনছি। লাভ তো করতে পারলাম না। তবে গরু পছন্দ হইছে।’

অন্যদিকে হাটে ছাগলের শেডে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার ছাগল আনা হয়েছে। ক্রেতাও বাড়ছে। দাম-দরে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে খাসি।  এ ছাড়া, হাটে এবার ৬ হাজার টাকায়ও খাসি মিলছে। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য খাসির দাঁত বের করেও দেখাচ্ছে বিক্রেতারা।

মোকসেদুল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘২৫০টি খাসি আনছি। কিছু বেচা হয়ে গেছে। আমার কাছে এখনো ৬ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার খাসি আছে। বিকেলের পর থেকে প্রচুর ক্রেতা হাটে আসছে। ক্রেতার পছন্দ হওয়ার মতো সব ধরনের খাসিই এবার হাটে আছে।’

হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শতকরা সাড়ে তিন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে পশু বিক্রির হাসিল। যা হাজারে ৩৫ টাকা। তবে ঈদের পাঁচদিন আগে তা হবে শতকরা ৫ টাকা। গরম বিবেচনায় পশু ও ব্যবসায়ীদের জন্য ফ্যান লাগানো ও পানির সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও তাদের রাখালদের জন্য করা হয়েছে হোটেলে খাবারের ব্যবস্থা। ১০০০- এর বেশি গরু, ছাগল, উট, মহিষ, দুম্বা ভেড়ার জন্য ছোট-বড় শেড তৈরি করা হয়েছে। এবার হাসিল ঘর রয়েছে ১৪টি। চাপ বেশি হলে তা বাড়ানো হবে। শৃঙ্খলা রক্ষায় ১১০০'র বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। চেকার নিযুক্ত করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক।

জেইউ/এমজে