চট্টগ্রামে ভূমি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেছেন, ভূমি অফিসে গেলে প্রত্যেক নাগরিককে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। প্রথমকে তাকে বসতে দিবেন। এক অফিস থেকে অন্য অফিসে না ঘুরিয়ে জটিল সমস্যা সুন্দর করে বসে সমাধান করবেন। কোনোভাবেই নাগরিকদের সঙ্গে অসদাচারণ করা যাবে না। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবেন। মনে রাখতে হবে আপনারা নাগরিকের সেবক। নাগরিকের টাকায় আপনাদের বেতনভাতা হয়।

বুধবার (১২ জুন) চট্টগ্রাম নগরের এম. এ আজিজ স্টেডিয়ামে সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে ভূমিসেবা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মার্ট বাংলাদেশ : স্মার্ট ভূমিসেবা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, নদী সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাবেই নদী বা নদীর আশপাশ ভরাট করা যাবে না। আমরা এসব বিষয় অত্যন্ত তীক্ষ্ণ সৃষ্টিতে দেখছি। আমাদের পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। কৃষি জমির শ্রেণি কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। ফসলি জমি ও কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। যেভাবে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ বছর পর আর কোনো কৃষি জমি থাকবে না। তাই আমাদের সজাগ হতে হবে।

তিনি বলেন, জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারব না। আমরা সবাই সমালোচনা করি। একে অন্যের সমালোচনা করি। কিন্তু নিজের সমালোচনা কেউ করি না। নিজের সমালোচনা নিজে যদি করি তাহলে অনেক কিছুর পরিবর্তন আসবে। বহুতল বিশিষ্ট ভবনে বসবাসে শান্তি নেই। সবাই মিলে সুষ্ঠু পরিবেশে বসবাস করাই শান্তি। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন একটি সমাজ ব্যবস্থা। যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী। এ সুন্দর চট্টগ্রামকে আরও সুন্দর করে সাজাতে চাই। আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। তিনি তার কথা রেখেছেন, চট্টগ্রামকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করা হচ্ছে।

নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, ভূমিসংক্রান্ত যে জটিলতা সেগুলো আমরা নিরসন করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আমরা যারা শিক্ষিত তারাও ভূমির অনেক বিষয়ে জানি না। তাই নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ভূমি সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয় রাখা হয়েছে। যাতে অন্তত নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও ভূমি সংক্রান্ত একটি ধারণা পাওয়া যায়। 

সিভিল মামলায় গেলে সে পরিবার একেবারেই শেষ। তার বাবা ছেলেকে, ছেলে তার ছেলেকে এ মামলা দিয়ে যায়। এতে কোনো সমাধান হয় না। উল্টো টাকা পয়সা হারিয়ে পথে বসতে হয়। তাই আমাদের ভূমি আইন সম্পর্কে জানতে হবে। জটিল বিষয় সমাধানের দিকে আসতে হবে। একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। 

তিনি বলেন, ভূমি সপ্তাহ করেই বসে থাকলে চলবে না। সব অফিসেই আমাদের সারা বছর ভূমি সংক্রান্ত ভূমি সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়েও ভূমি সংক্রান্ত সকল বিষয় হাতেকলমে শেখাতে চাই। অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজ করার ব্যবস্থা আমরা করেছি। একজন গ্রাহক ঘরে বসেই ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা নিতে পারবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, শুধু ভূমি বা জমির মালিক হলেই হবে না। সেটির বৈধ মালিক হতে হবে। মামলা জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে যে পরিমাণ জমির দাম তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে জমিটি উদ্ধার করতে। যার কারণে তৈরি হচ্ছে মানসিক অশান্তি। আমাদের ভূমি সংক্রান্ত আইন জানতে হবে এবং সে আইন মানতে হবে। জমি কেনার সময় সমস্ত কাগজপত্র সঠিক কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। যাতে এ জমি কেনার পর কাগজপত্র নিয়ে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (সিএমপি) কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি নূরে আলম মিনা ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি।

এমআর/পিএইচ