গাজীপুরে ১২ হাজার একর বনের জমি দখল করে কারখানা প্রতিষ্ঠার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুদকের গাজীপুর কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে সরেজমিনে পরিদর্শন ও রেকর্ডপত্রের প্রাথমিক বিশ্লেষণে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রীয় জমি দখলের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাজীপুরে বনের জমি দখল করে কারখানা প্রতিষ্ঠার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে দুদক টিম অভিযোগে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে। এ ছাড়া বন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। সরেজমিনে পরিদর্শন ও রেকর্ডপত্রের প্রাথমিক বিশ্লেষণে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রীয় জমি দখলের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া পায়। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৩২১ একর বনের জমি অবৈধ দখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে ৫০০ একর জমি। গত এপ্রিল মাসে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে মাত্র ৮.৭৯ একর বনভূমি।

অবশিষ্ট ভূমি রিসোর্ট, বাড়িঘর-দোকানপাট, হাটবাজার ও কৃষিজমি হিসেবে দখল করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িঘর তৈরি করে ২৩ হাজার ব্যক্তি দখল করা হয়েছে ১০ হাজার একরের বেশি বনভূমি। এতে বনভূমি উজাড় হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। অথচ এই আগ্রাসন ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বন বিভাগের। বরং নানা ফন্দিতে নতুন করে দখল হচ্ছে বনভূমি।

বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, শ্রীপুরে ধনুয়া মৌজায় আরএকে সিরামিকস চার একর, রশোওয়া স্পিনিং মিল চার একর, ডিবিএল সিরামিকস আট একর, অটো স্পিনিং মিলস ২.২০ একর, সাতখামাইর মৌজায় আকন্দ গার্ডেন ১৬ একর, রিফাত ব্যাগ ২৫ শতক, পটকা মৌজায় ট্রেড ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন ৭.৬৪ একর, কেওয়া মৌজার মিতা টেক্সটাইল ২.২০ একর, মেঘনা কম্পোজিট ৪০ শতাংশ, জোবায়ের স্পিনিং এক একর, ওমেগা সুয়েটার এক একর, সোলার সিরামিকস ৯০ শতাংশ, ইকো কটন ৪.৮৬ একর, ভাওয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ দুই একর, অনটেক লিমিটেড ৪.৯৪ একর, হাউআর ইউ টেক্সটাইল এক একর, অরণ্যকুটির ২.২২ একর, উইষ্টেরিয়া টেক্সটাইল ৫.৩৩ একর, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল দুই একর, এপেক্স নিট কম্পোজিট ১১.৬২ একর, গ্রেটওয়াল সিরামিকস ৭.৩৮ একর, টেপিরবাড়ি মৌজায় ডিবিএল গ্রুপ ছয় একর, তেলিহাটি মৌজায় কুঞ্জু বিথি এক একর, আলিফ অটো ব্রিকস ৭০ শতাংশ, টেপিরবাড়ী মৌজায় চায়না বাংলা প্যাকেজিং এক একর, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস ৭৬ শতাংশ, এইচ এস অ্যাগ্রো দেড় একর, রেক্স অটো ব্রিকস এক একর ৭০ শতাংশ, টেংরা মৌজায় শিশুপল্লী প্লাস সাড়ে ১২ একর, মম পোলট্রি ৭০ শতাংশ ও ওয়ারবিট স্টিল বিল্ডিং দুই একর বনের জমি দখল করেছে। পেলাইদ মৌজায় সিসিডিভি পাঁচ একর, সাইটালিয়া জামান পোল্ট্রি দুই একর, মাওনা মৌজার মনো ফিড ২.২৫ একর, এইচ পাওয়ার লিমিটেড ৩৩ শতাংশ, হোম ডিজাইন ১.২২ একর ছাড়াও বিবিএস কেবল, দি সোয়েটার, ইকো কটন মিলস, সিটিসেল লিমিটেডও বনের জমি দখল করেছে।

আরএম/এসএসএইচ