ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান বাজেটে জাতিকে শিক্ষিত করা যাবে না এবং শিক্ষার উন্নয়নও সম্ভব নয়। বর্তমান বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ খুবই কম। এই জাতিকে মেরামত করতে হলে শিক্ষার আমুল পরিবর্তন করতে হবে। ভোটারবিহীন সরকারকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে পতন করতে হবে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষার গুণগত মান ও বাজেট ২০২৪’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা কথা বলেন তিনি।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক নূরুন নবী মানিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর এ.টি.এম. ফজলুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার, অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক কবিরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যক্ষ ও গবেষক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।

আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যে জাতি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি দিয়েছে, তারাই তত বেশি উন্নত হয়েছে। যারা শিক্ষা বরাদ্দ কম করেছে, তারা জাতি হিসেবে শক্তিশালী হতে পারেনি। বর্তমান সরকার শিক্ষা নয় চায় ক্ষমতা। দেশে শিক্ষার বরাদ্দ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কারণ এবারের বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ মাত্র ১২ শতাংশ। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় নোংরা ছাত্র রাজনীতির কারখানা। ৭৩ আইন লঙ্ঘন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি চাটুকারিতা করে আট বছর পদে ছিলেন। 

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। শিক্ষা থেকে ইসলাম ধর্মের বিষয়গুলো বাদ দিতে চক্রান্ত চলমান। ভারতীয় ভাবধারা দিয়ে হিন্দুয়ানী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে গভীর চক্রান্ত চূড়ান্ত করেছে বর্তমান আওয়ামী সরকারের দোসররা। এখন শিক্ষার বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বাজেট কোনো ভাবেই শিক্ষাবান্ধব নয়।

বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার বলেন, বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। শিক্ষার মধ্যে শব্দ আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। আজকাল ভারতের আশির্বাদপুষ্ট সংবাদ মাধ্যম লাশকে মরদেহ বলে। এশিয়া ও আফ্রিকার কোনো দেশে বাংলাদেশের মত এত কম বরাদ্দ শিক্ষায় নেই। শিক্ষায় বরাদ্দটা ব্যয় নয়, এটা বিনিয়োগ। আমরা সেই বিনিয়োগ সঠিকভাবে করতে পারি না।

প্রফেসর এ.টি.এম. ফজলুল হক বলেন, ব্রিটিশরা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভাজন তৈরি করে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোটেও আশানুরূপ হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের যত ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, তার প্রতিফলন বাজেটে দেখিনি। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো নমুনাও দেখিনি।

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার পার্শ্ববর্তী দেশের শিক্ষার অনুরূপ শিক্ষা চালু করতে চায়। সরকার ক্রমেই শিক্ষা বাজেট কমিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ বিগত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকার কথা। শিক্ষায় বরাদ্দ কোনো খরচ নয়, বরং বিশাল বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। যেসব দেশ এটি বুঝতে পেরেছে, সেসব দেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জেইউ/কেএ