মুসলমানদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম ঈদুল আজহা। এ ঈদের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে পশু কোরবানি। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই জমে ওঠে পশুর হাট-বাজার। রাজধানী ঢাকায় ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে প্রধান ও স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষ্যে গাবতলী হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তৈরি হয়েছে প্রধান ফটক। হাটের সীমানা নির্মাণের কাজও শেষ। বাকি শুধু সাজসজ্জা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে কোরবানির পশু। তবে ক্রেতা হাতেগোনা। ক্রেতা আসলেই জমে উঠবে ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য ও চাঁদ দেখা কমিটির তথ্যমতে, এবারের ঈদুল আজহা ১৭ জুন। ঈদের বাজার ধরতে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে সারা দেশ থেকে পশু আসা শুরু হয়েছে এই স্থায়ী পশুর হাটে। আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কোরবানির হাট পুরোপুরি জমে ওঠার আশা ব্যবসায়ী ও ইজারাদার কর্তৃপক্ষের।

মঙ্গলবার(১১ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের তোরণ স্থান পরিবর্তিত হয়েছে। গাবতলী বেরিবাঁধ সড়ক নির্মাণ ও বাইপাস রোড নির্মাণের কারণে হাটের সামনের অংশ দেখে বোঝার উপায় নেই, আরেকটু সামনেই ঢাকার সবচেয়ে বড় পশুর হাট।

হাটের প্রধান তোরণের পাশেই ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে চলছে সাজসজ্জার কাজ। হাটের ভেতরে পশুর জন্য ছাউনি হরেক রঙের ত্রিপলে সাজানো হয়েছে। ধোয়া মোছার কাজও চলছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র‍্যাবের জন্যও উঁচু ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখনও ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের জন্য বুথ ঘর তৈরি হয়নি।

অন্যদিকে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হাট। যত্ন আর মমতায় অনেক রাখালকে গরু-ছাগলকে খাবার খাওয়াতে দেখা যায়।

হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শতকরা সাড়ে তিন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে পশুর বিক্রির হাসিল। যা হাজারে ৩৫ টাকা। তবে ঈদের পাঁচদিন আগে তা হবে শতকরা ৫ টাকা। গরম বিবেচনায় পশু ও ব্যবসায়ীদের জন্য ফ্যান লাগানো ও পানির সার্বক্ষণিক সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও তাদের রাখালদের জন্য করা হয়েছে হোটেলে খাবারের ব্যবস্থা। গরু, ছাগল, উট, মহিষ, দুম্বা ভেড়ার জন্য হাজারের বেশি ছোট বড় ছাউনি তৈরি করা হয়েছে।

গাবতলী পশুর হাটের সিনিয়র রাইটার দেওয়ান মো. ইকরাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন। বাকি শুধু লাইটিং আর সাজসজ্জা। ক্রেতা সমাগম কোরবানি ঘিরে কম। তবে আগামীকাল থেকে জমবে হাট।

তিনি বলেন, এবার হাসিল ঘর ১৪টি তৈরি করা হয়েছে। চাপ বেশি হলে তা বাড়ানো হবে। শৃঙ্খলায় ১১০০ এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। চেকার নিযুক্ত করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক। 

ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে জমে উঠবে পশুর হাট। তখন ক্রেতাদের চাহিদা মতো নামবে কোরবানির পশু। এবার বাড়তি দামের আশা তাদের।

সেখানে কথা হয় মানিকগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী মো. হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব এক সাইজের গরু আনছি। দাম সব ১ থেকে সোয়া লাখের মধ্যে। এই দাম ও সাইজের গরুর চাহিদা সবসময় বেশি। তবে এখনো কোরবানির ক্রেতা কম বললেই চলে।

১৬টি বড় সাইজের দেশাল জাতের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন মেহেরপুরের ব্যবসায়ী রায়হান মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ১৬টি গরুর মধ্যে দাম রয়েছে সর্বনিম্ন সোয়া দুই লাখ, সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ লাখ। ক্রেতারা আসছে, ছবি তুলছে, দাম হাঁকাচ্ছে। কিনছে না চলে যাচ্ছে।

তবে কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী কালু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার খরচা বেশি। আপাতত ৪টি গরু এনেছি। দাম সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। একেকটা গরু রাখা বাবদ দিতে হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এর বাইরে গরু আনা, গরু ও নিজের খাবার খরচ, রাখাল খরচ, সব মিলে লাখ টাকা বিক্রির আগেই চলে গেছে। চার গরু বেচে লাভ না লোকসান তবে আল্লাহ মাবুদ ভাল জানেন।

কবে থেকে জমতে পারে গরুর এই স্থায়ী হাট? জানতে চাইলে ছাগল ব্যবসায়ী মো. হাছান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে জমবে হাট। বৃহস্পতিবার মানুষ অফিস শেষ করেই হাটে আসবে। শুক্র-শনিবার তো অফিস আদালত বন্ধ। আর রোববার থেকে তো সরকারি ছুটিই। এবার মনে হচ্ছে হাট জমবে। দেরিতে হলেও হাট জমুক, সে আশায় আছি।

জেইউ/পিএইচ