ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে সরকারের দেওয়া সতর্ক সংকেত মানা হলে এতো প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হতো না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিসের সতর্ক সংকেত মানুষ গুরুত্ব দিতে চায় না, হাসাহাসি করে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেও মানুষ স্বাভাবিক চলাফেরা করে। রেমালেও আবহাওয়া অফিসের দেওয়া সংকেত মানলে এতো ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেনের যৌথ আয়োজনে 'বাংলাদেশের উত্তর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য স্থানীয় জনগণ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিশুদের জন্য পূর্বাভাস ভিত্তিক বহু আপদ মোকাবিলায় কার্যকর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ' শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

কেএম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আমরা চেষ্টা করেছি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করতে। আমাদের সতর্কতায় যদি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসত, তাহলে হয়ত ক্ষতিটা হতো না। ৩ নম্বর সিগন্যাল দিলে মানুষ হাসাহাসি করে।

তিনি বলেন, সিডরের সংকেতও মানুষ বিশ্বাস করেনি, কারণ এর আগেই আমরা সুনামির একটা সতর্ক সংকেত দিয়েছিলাম যা আসেনি। কিন্তু পরে সিডরে আমরা ক্ষয়ক্ষতি দেখেছি। গত কিছুদিন আগে রেমালে আমরা দেখেছি প্রচুর লোক ইলিশ ধরতে বের হয়ে গেলো। ওই সময় নাকি ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। তাদেরকে আমরা কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছিলাম না। জীবন আগে নাকি জীবিকা আগে, সেটাকে আমরা বুঝাতে পারিনি।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সেল্টার হোমগুলোতে মানুষ যেতে চায় না। কারণ তার জিনিসপত্র হারানোর ভয় থাকে। এজন্য আমরা প্রতিটি বাড়িকেই শেল্টার হোমে পরিণত করতে চাই। এর আগে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শেল্টার হোমে থাকতে হয়েছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু রেমালে বেশি সময় থাকতে হয়েছে। কারণ রেমাল দীর্ঘসময় অবস্থান করেছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বে পরিবেশ জলবায়ুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে চীন। তারা জোরগলায় বলছে, এখনও নাকি অনেক বাকি। তারা নাকি এখনও ক্ষতির কিছুই করেনি। এদিকে সাউথ কোরিয়ায় অনেক বড় বড় উন্নয়ন কার্যক্রম করেছে, তারা ক্ষতি তো দূরের কথা একটা পিঁপড়ার ক্ষতিও করেনি। তাদের সোজা বক্তব্য, পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন করতে পারলে করো, না হয় কোনো উন্নয়নের দরকার নেই।

আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমাদের আইনের কিছু জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে, কারণ সেগুলো উন্নয়ন বিরোধী। আমরা প্রকৃতিকেও বাঁচাতে চাই, পরিবেশও ঠিক রাখতে চাই আবার উন্নয়নও করতে চাই। কীভাবে অল্প ক্ষতি করে বিশাল পরিমাণ উন্নয়ন করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।

কর্মশালায় সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুৎফুন নাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আবদুল ওয়াদুদ, জার্মান দূতাবাসের প্রতিনিধি সিল্কি শিমার এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ও প্রোগাম অপারেশনস রিফাত বিন সাত্তার।

টিআই/জেডএস