ঈদযাত্রায় যাত্রীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ট্রেন। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় ট্রেনের আসন অপর্যাপ্ত। কাজেই বিপুল পরিমাণ যাত্রীর বাড়ি ফেরার শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ায় বাস। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে-পরে বাসের টিকিটের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ সুযোগে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেন বাস মালিকরা। বিকল্প না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়তি দামেই টিকিট কাটতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বরাবরের মতো এবারের চিত্রও একই।

দেশজুড়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে ১৭ জুন। সে হিসাবে এখনও বাকি আট দিন। ঈদের এই দিনটিকে ধরে ১৬ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঈদ যাত্রা শুরু হবে আগামী ১৩ জুন থেকে। কারণ ওই দিন বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবস। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী নামি-দামী পরিবহনের বাসের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফলে এসব কাউন্টারে এসে যাত্রীদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, ছোট কোম্পানির বাসের টিকিট এখনও আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা সেগুলো বিক্রি করছেন না। ঈদ আরও ঘনিয়ে আসলে সেসব টিকিট আরও বেশি দামে বিক্রির পাঁয়তারা করছেন তারা। বড় কোম্পানিগুলোরও সব টিকিট বিক্রি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা হয়ত সিস্টেম ব্লক করে রেখেছে। যাতে সময় সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে।

যখন বেসরকারি বাসের টিকিটের এই হালচাল, তখন কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছে দেশের রাষ্ট্রীয় গণপরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। সংস্থাটি আগামীকাল থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করবে।

বড় বাস কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষ্যে ১৩, ১৪ ও ১৫ জুনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। টিকিট তো অনলাইনে আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে কাউন্টার থেকে নতুন করে টিকিট দেওয়া যাচ্ছে না।

নুরুদ্দীন তাসলিম নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের আগে শেষ অফিস করতে হবে ১৫ জুন। ওই দিন রাতে পঞ্চগড় যাওয়ার জন্য ১০ দিন আগে একটি টিকিট আমি অনলাইন থেকে কেটেছি। তখন আমি ন্যায্য দামেই টিকিট কিনতে পেরেছি। কিন্তু কাউন্টারে গেলেই ওরা আরও ২০০/৩০০ টাকা বেশি নেবে। এখন তো আর অনলাইনে টিকিট নেই। সব বুক হয়ে আছে। আমার পরিচিত অনেকই কাউন্টার থেকে ফিরে এসেছেন। আবার কেউ ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিয়েও টিকিট পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এবার ট্রেনের টিকিট পাইনি, আতঙ্কে আছি। ঈদের আগের দিন রাস্তায় প্রচুর যানজট হতে পারে। এর আগের সময়গুলোতে ১২ ঘণ্টার বাস যাত্রা ২৪-২৮ ঘণ্টা পর্যন্ত করার অভিজ্ঞতা আছে।

বেলাল হুসাইন খান নামে আরেকজন বেসরকারি চাকরিজীবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৩ জুন রাতে যাওয়ার জন্য অনলাইন থেকেই বাসের টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি আরও ১০ দিন আগে। শুনতে পাচ্ছি, এখন নাকি আর টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

অনলাইন ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচল করা হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, শ্যামলী এন. আর. ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলসসহ জনপ্রিয় পরিবহনগুলোর বাসের কোনো আসন ফাঁকা নেই; দক্ষিণবঙ্গের দিকে চলাচল করা সাকুরা পরিবহন, গ্রিন লাইন পরিবহনসহ জনপ্রিয় পরিবহনগুলোর বাসের কিছু আসন ফাঁকা আছে; পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বাসগুলোর কিছু আসন ফাঁকা আছে; এবং সিলেট রুটের বাসগুলোর কিছু আসন ফাঁকা আছে।

এদিকে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস স্ট্যান্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব পরিবহনের বহরে ২ থেকে ২০টির কম-বেশি বাস আছে তারা যাত্রা শুরুর আগে বাসের টিকিট দিয়ে থাকে। এদের কোনো অনলাইন সিস্টেম নেই। যাত্রীরা বাসগুলোর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে আসন সংগ্রহ করে থাকেন।

অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারে বাসগুলো 

ঢাকা-সরিষাবাড়ি রুটের যাত্রী নুবায়েত হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের রুটের বাসগুলোর কোনো অনলাইন সিস্টেম নেই। মহাখালী থেকে কখন বাস ছাড়ে সেই সময় আমাদের জানা আছে। আমরা ওই সময়ের আগে গিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে উঠি। সাধারণত এ পথে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকে। তবে ঈদের সময় এ ভাড়া হয়ে যায় ৫০০ টাকার বেশি।

ঢাকা-সরিষাবাড়ি রুটের একটি বাসের সুপারভাইজার সুলতান মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ির ভাড়া ৩৫০ টাকা করে। কিন্তু ঈদের ৩/৪ দিন আগে এই ভাড়া থাকবে না। কত হবে সেটি এখনই বলতে পারছি না।

ঢাকা-মদন (নেত্রকোণা) রুটের যাত্রী শামস প্রত্যয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার মহাখালী থেকে নেত্রকোণার মদন পর্যন্ত এখন ভাড়া ৪৫০ টাকা। তবে ঈদে এটা ভোগান্তির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই ভাড়া ৬০০ টাকার বেশি নিয়ে থাকেন বাস সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-মদন (নেত্রকোনা) রুটের হযরত শাহজালাল এক্সপ্রেস বাসের মহাখালী কাউন্টার থেকে ঢাকা পোস্টকে জানানো হয়, এই রুটে এখন ৪৫০ টাকাই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে ২/৩ দিন পরে ভাড়া বাড়তে পারে। তবে কত হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ব্যবস্থা

এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কি না, সেটি তদারকি করতে মাঠে নামবে পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। বিআরটিএর উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের সময় বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব। সে জন্য সবকিছু প্রস্তুত করা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১০ জুন 

বিআরটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) শুকদেব ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষ্যে স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষ্যে আগামী ১৩ জুন থেকে বিআরটিসি ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আয়োজন করেছে। ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের টিকিট আগামীকাল থেকে বিক্রি শুরু হবে। আমাদের বাস চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে যাত্রার ক্ষেত্রে মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (চাষাড়া) থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে।

বিআরটিসির তথ্য মতে, মতিঝিল বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-ঠাকুরগাঁও, ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-কুষ্টিয়া, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-গোপালগঞ্জ, ঢাকা-জয়পুরহাট, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-কলমাকান্দা রুট; কল্যাণপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-নেত্রকোনা, ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-ঠাকুরগাঁও, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-গোপালগঞ্জ, ঢাকা-গাইবান্ধা, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট, ঢাকা-কুড়িগ্রাম, ঢাকা-কুষ্টিয়া, ঢাকা-নাগরপুর, ঢাকা-পাটুরিয়া, ঢাকা-নালিতাবাড়ী রুট; গাবতলী ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-ভাটিয়াপাড়া, ঢাকা-পাটুরিয়া রুট; জোয়ারসাহারা বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-ময়মনসিংহ, সিবিএস-২ (গুলিস্তান)-বরিশাল, ঢাকা-বগুড়া রুট; মিরপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-ঠাকুরগাঁও, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-স্বরূপকাঠি, ঢাকা-গোপালগঞ্জ, ঢাকা-বগুড়া রুট।

মোহাম্মদপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-গোপালগঞ্জ, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুট; গাজীপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে গাজীপুর-খুলনা, গাজীপুর-বরিশাল, গাজীপুর-রংপুর, গাজীপুর-বগুড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুট; যাত্রাবাড়ী বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-কুড়িগ্রাম, ঢাকা-ভাঙ্গা (ফরিদপুর), ঢাকা-বরিশাল রুট; নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে ঢাকা-ভাঙ্গা (ফরিদপুর), ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-হবিগঞ্জ, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট, ঢাকা-নওগাঁ, ঢাকা-নেত্রকোণা, ঢাকা-বগুড়া রুট।

এমএইচএন/এসকেডি