রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে মনিরুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবল গুলিতে নিহত হয়েছেন। এঘটনায় আরও দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত কনস্টেবল কাউসার আলীকে নিরস্ত্র করে গুলশান থানা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কনস্টেবল কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। গত কয়েক দিন তিনি কোনো সহকর্মীর সঙ্গে তেমন কথাবার্তাও বলেননি।

সূত্র জানিয়েছে, কাউসার গত ৫-৬ দিন ধরে বেশ চুপচাপ ছিলেন, কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। মনিরুলকে গুলি করার পর তিনি অনেকটা ভারসাম্যহীন আচরণ করছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করার পর কাউসার আলী ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরা ফেরা করছিলেন। কিছু সময় তিনি দূতাবাসের সামনে বসে ছিলেন। এ সময় তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন।

ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশার আরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা হামলাকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি তিনি পাঁচ-ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।’

৭-রাউন্ড গুলি ছোড়েন কাউসার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিস্তিন দূতাবাসের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ঘটনার সময় আমরা দূতাবাসের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ করে ৭ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি শব্দ শুনে বাইরে আসি। বাইরে আসার পর কাউসারকে দেখি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর একটু দূরেই পড়ে রয়েছে মনিরুলের দেহ। তখন আমরা কাউসারকে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। তখন সে বলে শালা (মনিরুল) নাটক করতেছে, এমনি মাটিতে পড়ে রয়েছে। এই কথা বলে কাউসার দূতাবাসের বিপরীত পাশে রোডে চলে যায় ‌। এরই মধ্যে সবাই বুঝে ওঠে যে কাউসার মনিরুলকে গুলি করেছে। এরপর ঘটনাস্থলে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা কাউসারকে আটক করে।

ঘটনাস্থলের আশপাশে একাধিক দেশের দূতাবাস

সরেজমিনে দেখা যায়, কাউসার আলী যে জায়গায় মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেন সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের নিরাপদ ও স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এইখানে রয়েছে একাধিক রাষ্ট্রের দূতাবাস। ঘটনা যেই স্থানে ঘটে সেটি হচ্ছে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের সামনে। এর পাশে রয়েছে চীন ও জাপানের দূতাবাস। ঘটনাস্থল থেকে একটু দক্ষিণ দিকে এগোলে রয়েছে তুরস্ক, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, উত্তর দিকে যুক্তরাজ্যের দূতাবাস। এমন একটি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটায় কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় রাতে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা পুলিশের মহাপরিদর্শ (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের কাছে।  এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমাদের লোক ছিল, ঘটনা যে ঘটিয়েছে সেও আমাদের লোক। আসলে ঘটনাটা কী কারণে ঘটেছে সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।’

এমএসি/এসএমডব্লিউ