চট্টগ্রামের চকবাজারের ইসলামী ব্যাংক শাখার লকার থেকে ১৫০ ভরি সোনা উধাও হওয়ার অভিযোগের ঘটনায় এবার গ্রাহকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জিডিতে গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। 

মঙ্গলবার (৪ মে) ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ ইউনুছ জিডিটি করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রাহকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

জিডিতে বলা হয়, গত ৮ এপ্রিল আনুমানিক দুপুর দুইটায় গ্রাহক লকার ব্যবহারের জন্য শপিং ব্যাগসহ লকার রুমে প্রবেশ করলে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে মাস্টার কী (চাবি) দিয়ে লকার আনলক করে দেই। এরপর গ্রাহকের কাছে থাকা মূল চাবি দিয়ে লকার খুললে আমি লকার রুমের বাইরে চলে আসি। পরে তার কাজ শেষ করে করে শপিং ব্যাগসহ লকার রুম ত্যাগ করার পর আমরা যথারীতি লকার রুমের মূল ফটক বন্ধ করে দেই। তিনি তার লকারে কি রেখেছেন বা লকার থেকে কি নিয়ে গেছেন সে বিষয়ে ব্যাংকের অবহিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। লকার ব্যবহার শেষে শুধুমাত্র লকার হোল্ডারের চাবি ব্যবহার করে লকার বন্ধ করা হয়। ওই সময়ে লকার রুমে আমাদের কারো উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে না এবং বিধানও নেই। গ্রাহকের প্রাইভেসি রক্ষার্থে লকার রুমের ভেতরে সিসি ক্যামেরাও থাকেনা।

জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২৯ মে লকার হোল্ডার তার লকার চেম্বার ব্যবহার করতে এলে যথানিয়মে আমি এবং ওই লকার হোল্ডার দুপুর দেড়টার সময় প্রবেশ করি। এসময় লকার হোল্ডার তার নির্ধারিত লকারের শার্টার খোলা মর্মে জানালে আমরাও লকার পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই যে, লকারের শার্টারের লিভারটি "লকড" অবস্থায় থাকলেও তা নির্দিষ্ট ছিদ্রে প্রবেশ না করায় লকারের দরজাটি আংশিক খোলা। কিছুক্ষণ পর লকার হোল্ডার মৌখিকভাবে জানান ১৫০ ভরি স্বর্ণ নেই। ইতোমধ্যে লকার হোল্ডারের অনুরোধে চকবাজার থানার পুলিশ ফোর্স সরেজমিনে লকার রুম পরিদর্শন করে এবং আমাদের নিকট থেকে লকর খোলা-বন্ধ করার পদ্ধতি জেনে নেন ও গ্রাহকের প্রাপ্ত মালামালের স্থির চিত্র ও ভিডিও করে চলে যান। 

জিডিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে লকারের লক সঠিকভাবে বন্ধ করা না করার দায় সম্পূর্ণ গ্রাহকের উপর বর্তায়। সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি যে, ওই গ্রাহক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অদ্যাবধি কোনো লিখিত অভিযোগের পরিবর্তে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এদিকে এর আগে সোমবার (৩ মে) রাত নয়টার দিকে নগরের চকবাজার থানায় অভিযোগ করেন রোকেয়া বারী নামের ওই নারী গ্রাহক। এতে ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিব উল্লাহ, চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী ও লকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইউনুস।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে এক গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেহেতু এটি ব্যাংকের বিষয়, তাই অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তফসিলভুক্ত হওয়ায় এটি দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোকেয়া বারী অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম নগর চকবাজার শাখায় তার একটি ব্যাংক হিসাব ও লকার রয়েছে। গত বুধবার তিনি কিছু গয়না আনতে ব্যাংকে যান। এরপর লকারের দায়িত্ব থাকা ব্যাংকের এক কর্মকর্তার চাবি দিয়ে লকার খুলতে গিয়ে দেখেন আগে থেকে এটি খোলা। পরে তিনি লকারে দেখেন ১০ থেকে ১২ ভরি স্বর্ণ ছাড়া বাকি ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি চকবাজার থানার ওসিকে জানান। ওসি পুলিশ ফোর্স নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখেন ওই লকারে স্বর্ণালংকার নেই।

রোকেয়া আরও উল্লেখ করেন, ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকারের মধ্যে ৪০টি হাতের চুড়ি (৬০ ভরি), গলা ও কানের দুলের সেট ২৫ ভরি, গলার সেট ১০ ভরি, হাতের আংটি পাঁচটি ১৫ ভরি, গলার চেইন সাতটি ২৮ ভরি, কানের দুল ৩০ জোড়া ১১ ভরি।

রোকেয়া আক্তারের অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) ও চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বর্ণ মিসিংয়ের (উধাও) অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং অভিযোগের সত্যতা জানতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

আরএমএন/এমএসএ