মালয়েশিয়ায় যেতে না পারাদের ভাগ্যে আসলে কী আছে?
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার পর মে মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী দেশটিতে পাড়ি দিয়েছেন। যদিও নির্ধারিত সময়সীমা ৩১ মে’র মধ্যে যেতে প্রস্তুত থাকা আরও হাজার হাজার কর্মীকে দেশটিতে পাঠাতে পারেনি নিয়োগকারী এজেন্সিগুলো। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠেছে এজেন্সি ও সরকারি ব্যবস্থাপনার অনিয়ম নিয়ে।
যদিও বিপুল সংখ্যক কর্মীর এমন স্বপ্নভঙ্গে নিজেদের দায় দেখছে না সরকার কিংবা এজেন্সি সিন্ডিকেটের কেউ। তাহলে এসব শ্রমিকদের ভাগ্যে কী ঘটবে? তারা কি আদৌ মালয়েশিয়া যেতে পারবেন? না যেতে পারলে এজেন্সিকে দেওয়া অর্থ কি ফেরত পাবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার নয়।
বিজ্ঞাপন
৩১ মে’র পর বাংলাদেশিদের আর মালয়েশিয়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না এমন ঘোষণা দুই মাস আগেই দিয়েছিল দেশটি। ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশন এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনও বিষয়টি আগেই সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিল। তবুও হাজার হাজার বাংলাদেশি লাখ লাখ টাকা খরচ করেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এর জন্য শ্রমিকরা দায়ী করছেন এজেন্সি মালিকদের। তাদের অভিযোগ, অনেক এজেন্সি ইচ্ছে করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের দায় নিচ্ছে না এজেন্সিগুলো। তারা বলছে, এই অবস্থার জন্য দায়ী মালয়েশিয়া সরকার এবং বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ। যদিও তাদের পক্ষ থেকে এখন শ্রমিকদের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে আবার উদ্যোগ নিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর কিংবা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। কিন্তু সেটা কতটুকু বাস্তব তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এজন্য তারা নেমেছেন আন্দোলনেও। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
আরও পড়ুন
শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আজ সংবাদ সম্মেলন করে বায়রা এবং সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো।
সেখানে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, গত ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার ই-ভিসা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশ সরকারও অনুমোদন দিয়েছে। ৩১ মেও যদি ই-ভিসা ইস্যু করা হয় তাহলে আমরা তালিকা কীভাবে তৈরি করব? ১৫ মার্চ থেকে যদি ভিসা ইস্যু বন্ধ করা হতো তাহলে সংকট তৈরি হতো না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়া সরকার বিষয়টি দেখলে এ সংকট তৈরি হতো না।
বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ১০১ জন ব্যবসা করেছে, তাদের সুযোগ দিয়েছে কে? দুই দেশের মন্ত্রণালয়। আমাদের যে লোকগুলো যেতে পারেনি তাদের পাঠানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি, সরকারও চেষ্টা করেছে। কথা দিলাম, যারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের তালিকা করতে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। আমরা তাদের বলব, যেসব এজেন্সি তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে পারেনি তাদের নাম আমাদের এখানে এসে লিপিবদ্ধ করতে। এজেন্সিকে কত টাকা দিয়েছে সেটাও লিপিবদ্ধ থাকবে। সরকার যদি তাদের পাঠাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায় করে কর্মীদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি করেছে সেই তদন্ত কমিটির চিঠি আমাদের কাছেও এসেছে। চিঠিতে তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার বিষয়টি বলা হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সঙ্গে রয়েছি। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের পরে যেসব কর্মীরা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি যদি সম্ভব হয় এই কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠানো যায় কি না সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
যা বললেন প্রতিমন্ত্রী
সরকারকে অভিযুক্ত করে এজেন্সি মালিকদের দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ই-ভিসা দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। তার জন্য আমরা দায়ী নই। আমাদের কাছে যে সময় ফাইল এসেছে, আমরা সেগুলো সে সময় সাইন করে দিয়েছি। আমি মনে করি যেটা হয়েছে, তার ব্যাপারে কেউ কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে অতীতেও কাজ করেছে সরকার, বর্তমানেও কাজ করছে, ভবিষ্যতেও তাদের কল্যাণে কাজ করা হবে। আমরা দক্ষ অভিবাসী কর্মী বিদেশে প্রেরণের পাশাপাশি প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের অর্জিত জ্ঞান ও পুঁজি দেশের সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যুক্তকরণের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি।
এজেন্সিগুলো প্রতারণা করেছে, শাস্তি চান শ্রমিকরা
এদিকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে অর্থ ফেরত চেয়েছেন মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা। একইসঙ্গে যাদের অবহেলায় তারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানান তারা।
ভুক্তভোগীরা বলেন, মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন তারা বলছে যে, আমাদের মালয়েশিয়ায় পাঠাতে পারবে না। তাহলে কেন আমাদের কাছ থেকে টাকা নিল? আমরা আমাদের অর্থ ফেরত চাই। দ্রুত আমাদের অর্থ ফেরত দিতে হবে। শুধু অর্থ ফেরত দিলে হবে না, আমাদের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
এসকেডি