মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি ১৭ হাজার শ্রমিক
দায় নিতে নারাজ এজেন্সি মালিকরা, দেখালেন নানা অজুহাত
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ভিসা পাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের শেষ দিন ছিল গত ৩১ মে। শেষ সময়ে বহু চেষ্টার পরও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র পাওয়া প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাননি। এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশটিতে কর্মী পাঠাতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ দেশের রিক্রুটিং এজেন্সির একাংশ।
তাদের দাবি, শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৪ জুন) বঙ্গ-মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এবং মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।
আরও পড়ুন
বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, গত ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার ই ভিসা ইস্যু করেছে। বাংলাদেশ সরকারও অনুমোদন দিয়েছে। ৩১ মেও যদি ই-ভিসা ইস্যু করা হয় তাহলে আমরা তালিকা কীভাবে তৈরি করব? ১৫ মার্চ থেকে যদি ভিসা ইস্যু বন্ধ করা হতো তাহলে সংকট তৈরি হতো না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়া সরকার বিষয়টি দেখলে এ সংকট তৈরি হতো না।
এ প্রসঙ্গে বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ১০১ জন ব্যবসা করেছে, তাদের সুযোগ দিয়েছে কে? দুই দেশের মন্ত্রণালয়। আমাদের যে লোকগুলো যেতে পারেনি তাদের পাঠানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি, সরকারও চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, কথা দিলাম, যারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের তালিকা করতে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। আমরা তাদের বলব, যেসব এজেন্সি তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠাতে পারেনি তাদের নাম আমাদের এখানে এসে লিপিবদ্ধ করার। এজেন্সিকে কত টাকা দিয়েছে সেটাও লিপিবদ্ধ থাকবে। সরকার যদি তাদের পাঠাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায় করে কর্মীদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
কর্মীদের কাছ থেকে চার গুণ টাকা বেশি নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ৪-৫ লাখ নেওয়ার যে অভিযোগ ওঠেছে সেটা সঠিক নয়। এ রকম অভিযোগ অনেকে করে।
বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয় যে তদন্ত কমিটি করেছে সেই তদন্ত কমিটির চিঠি আমাদের কাছেও এসেছে। চিঠিতে তদন্তকাজে সহযোগিতা করার বিষয়টি বলা হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সঙ্গে রয়েছি। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের পরে যেসব কর্মীরা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি যদি সম্ভব হয় এই কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠানো যায় কি না সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
রিক্রুটিং এজেন্সি বলছে, প্রায় ছয় হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ১৬-১৭ হাজার কর্মী যায়নি সেটা আজকের বিষয় না এটা গত ২২ মাস আগের। এটা অনেক আগে থেকেই সেটেল্ড হচ্ছিল। বছর শেষে যখন ব্যবসা শেষ হলো তখন আমরা বলছি টোটাল ১৭ হাজার কর্মী যেতে পারেনি। ১০১টা এজেন্সি যখন তাদের নম্বর সাবমিট করবে তখনই বলা যাবে আসলে কতজন কর্মী এখনো যাওয়া বাকি আছে। এছাড়া সব সময় যতগুলো ক্লিয়ারেন্স হয় ততজন কর্মী যায় কথাটা সত্য নয়।
বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজির আহমদ বলেন, এমপিদের নেতৃত্বে ২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে সেটা ভিত্তিহীন। এ রকম তথ্য দিয়ে ক্ষতিটা কার হচ্ছে? কোনোভাবেই আপনারা এটা প্রমাণ করতে পারবে না যে এমপিরা এমনটা করেছেন। কারণ হলো ১০১টা লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আমরা তো মালয়েশিয়ায় যাইনি। কাউকে বলিনি যে আমাদের লাইসেন্স দেন। নিয়ম মেনেই সব হয়েছে।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, সিন্ডিকেট বলে কোনো শব্দ নেই। ১০১ এজেন্সির মধ্যে সরকারও আছে। যেখানে সরকার আছে সেখানে সিন্ডিকেট নেই। মালয়েশিয়া সরকার যাদের সিলেক্ট করেছে শুধু তারাই কর্মী পাঠিয়েছে।
একই প্রসঙ্গে বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, বিশ্বাস করেন, আমরাও সিন্ডিকেট চাই না।
এনআই/এসকেডি