‘ডেঙ্গুর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা’ সংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সুয়োমোটোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ার আগেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।

মঙ্গলবার (৪ জুন) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, গত ২ জুন ‘ডেঙ্গুর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা’ সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ গ্রহণ করেছে কমিশন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে সুয়োমটোতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্ষা আসতে না আসতে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে। কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই এডিস মশা দমন করা না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে মৃত্যুও।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলের তথ্য মতে, গত ১ জুন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে দুইজন। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৮৫৩ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৩৬ জন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১১০ জন। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি জানার জন্য গত ১৭ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার অনুসন্ধান জরিপ চালানো হয়েছে। কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের ২১টি টিম ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উক্ত জরিপ পরিচালনা করেছে। রাজধানীর ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে ওই জরিপ পরিচালনা হয়েছে। জরিপে তিন হাজার ১৫২টি বাড়িতে সার্ভে করা হয়। ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে বহুতল ভবন শতকরা ৪২.৩৩ শতাংশ। এছাড়া, স্বতন্ত্র বাড়িতে ২১.৬ শতাংশ, নির্মাধীন ভবনে ২১.৬ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ১২৭৪ শতাংশ ও খালি জায়গায় ১.৭৩ শতাংশ এডিস মশার লাভা পাওয়া গেছে।

সুয়োমটোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রতি বছরেই বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে রাজধানীবাসীর মধ্যে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করে। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বছরেও এডিস মশাবাহিত এ রোগ ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

কমিশন মনে করে, পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ার পূর্বেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন। এ লক্ষ্যে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত সর্বত্র মশক নিধন কীটনাশক প্রয়োগ ও গণসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয়েছে।

আদেশের অনুলিপি জ্ঞাতার্থে এবং প্রয়োজনীয় কার্যার্থে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী ১০ আগস্ট প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।

জেইউ/কেএ