দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দিনাজপুরের বিরলে নৌকার প্রচারে অংশ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ৯২ বছর বয়সী নারী শ্রীমতি কামবালা। ভোটে জয় পেয়ে উপহার নিয়ে তাকে দেখতে গিয়েছেন এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জানা যায়, সেই কামবালাকে বাড়ি করে দিয়েছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী। জরাজীর্ণ মাটির ঘরে আর থাকতে হবে না ৯২ বছর বয়সী কামবালাকে।

নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজস্ব অর্থায়নে তিনটি বাড়ি পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত কামবালা বলেন, ‘মুই খুব খুশি হইচো, মোর বেটা মোক তিনটি বাড়ি বানায় দিছে।’

ভোটের আগে দিনাজপুর-২ (বিরল-বোঁচাগঞ্জ) আসনের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারে নির্বাচনী পথসভা করছিলেন খালিদ মাহমুদ। বর্ষীয়ান কামবালা সেদিন শতশত মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে একেবারে পৌঁছে যান খালিদের সামনে। সে সময় নৌকার প্রার্থী খালিদের হাতে ১০ টাকার একটি নোট দিয়ে কামবালা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকায় খালিদ যেন ভোট দেন আর এই টাকাও যেন ভোটের কাজে খরচ করা হয়। খালিদ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত অন্যদের কাছেও নৌকায় ভোট চান এই নারী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো নৌপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ভোটের পর প্রথমবারের মতো নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে প্রথমেই গিয়েছিলেন কামবালার বাড়িতে।

নতুন বাড়ির ঘরে খাটে বসার অনুরোধ জানিয়ে কামবালা বলেন, ‘বেটা মোর ঘরত বসিলে হইচো।’ চলতি ভাষায় দেওয়া উত্তরে খালিদ বলেন, ‘আমি তো তোর ঘরে বসবার জন্যই আইচ্চু।’ পরে প্রতিমন্ত্রী কামবালার ঘরে বসে আপ্যায়ন নেন।

উচ্ছ্বসিত কামবালা বলেন, ‘মুই কল্পনাও করিবার পরনি যে মুই বিল্ডিংয়ের ঘরত থাকিবার পারিম। মোর ছাওয়ালগুলা মানুষের জমিত ধান আবাদ করি যে টাকা পায় তা দিয়ে কোনমতে মোর বাড়ির লোকের পেটত খাবার জোটে আর ঘর-বাড়ি তো দূরের কথা। মুই যেই পরিমাণ খুশি হইচো, তা কখনও ভাবিবাও পারনাই। মোর জীবনে সবথাকি আজকা বেশি খুশি হইচো মোর সব বেটা গুলাক ঘরবাড়ি দি। অনেক অনেক ধন্যবাদ মোর বেটা মোক যে ঘরবাড়ি দিছে।’

এ সময় নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরল অভিজ্ঞতা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমি এতদিন রাজনীতি করেও যেটা শিক্ষা লাভ করিনি, আমাদের গদাবাড়ী গ্রামের ৯২ বছরের এই বৃদ্ধা কামবালা আমাকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন। একটি ভোট একটি এলাকার জন্য, একটি দেশের জন্য, সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তিনি দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে কালিয়াগঞ্জ স্কুল মাঠে জানুয়ারির ৩ তারিখ নির্বাচনী প্রচারণা অংশ নিয়েছিলাম। সেই পথসভাটি জনসভায় রূপ নিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে আমার মা-বোনেরা। সেই অনুষ্ঠানে এত মানুষের ভিড় ঠেলে কামবালা সামনে আসেন। কিন্তু তিনি তার প্রার্থীকে চেনেন না। অথচ তিনি যে আদর্শকে সমর্থন করেন, যে দলের প্রতি তার ভরসা আছে, যে নেতৃত্বের প্রতি তার বিশ্বাস আছে, সেই নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভামঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রার্থীকে খুঁজে নিয়েছেন। তিনি সেই সময় তার যৎসামান্য সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রতি কামবালার অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি যখন তাকে (কামবালাকে) নৌকার ব্যাচ পরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন— আমি এই প্রতীক চিনি, এই প্রতীক আমাকে চেনাতে হবে না। নৌকা মার্কার প্রতি তার অগাধ আস্থা-বিশ্বাস, তা দেখে একজন প্রার্থীও একজন ভোটারের কাছে পরাজিত হয়ে গেছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কামবালার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, কামবালা হচ্ছে ভোটার অব দ্যা ইলেকশন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এটা শুধু ভোটের বিষয় নয়, শিক্ষণীয় বিষয়। একটি ভোট একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটি ভোট একটি দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারে। একটি ভোট একটি জনগোষ্ঠীকে সমগ্র পৃথিবীতে জাগ্রত করতে পারে। 

এমএসআই/এমজে