রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে মারা যাওয়া শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ অভিযোগ করেছেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইউনাইটেড গ্রুপ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হুমকি দিচ্ছে। একাধিকবার বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সেজন্য আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান তিনি।

বুধবার (২৯ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়ান হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

শামীম আহমেদ বলেন, দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এই পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা বিচারের আওতায় আনা হয়নি। বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরস্পর যোগসাজশ করে দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আয়ানের মৃত্যুর পর ইউনাইটেড হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছিল। যা ছিল কেবল লোক দেখানো। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনাইটেড হাসপাতালকে বাঁচানোর অপচেষ্টা করছে।

আগামী ৭ দিনের ভেতর অভিযুক্ত দুই ডাক্তার সাঈদ সাব্বির ও তাসনুভা মাহজাবিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দোষীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাহলে আমরা কিভাবে বুঝব যে এই ঘটনার বিচার পাবো। যদি ৭ দিনের ভেতর অভিযুক্ত দুই ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবো। ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করবো।

আয়ানের বাবা আরও অভিযোগ করেন, বাড্ডা থানা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চারটি তথ্য বারবার চাহিদা পত্র দেওয়া হলেও সেগুলো জানানো হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশ, ডিবি, ডিজিএফআই সকলেই আমাদেরকে একটি গোলকধাঁধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা একটি পক্ষকে বাঁচানোর অপচেষ্টা করছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার বিচার প্রার্থনা করছি। যদি আমার ছেলে হত্যার বিচার না পাই তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারও হবে। তাই আমি সবার প্রতি অনুরোধ জানাই যেন বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিশু আয়ানের দাদা সালাম কবির। তিনি বলেন, আমরা যেন এই মামলার থেকে সরে আসি সেজন্য বারবার সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে আমার সুস্থ নাতিকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আগামী সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে আমরা আমরা অনশন কর্মসূচি পালন করবো।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুন্নাতে খতনার (মুসলমানি) জন্য আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবক। সকাল নয়টার দিকে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খাতনা করান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে জ্ঞান না ফেরায় তাকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে এই ঘটনায় বাড্ডা থানায় ২ ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ।

আরএইচটি/এমএসএ