আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আগামীকাল (বুধবার)। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। মানবিক কর্মকাণ্ড, অপারেশনাল দক্ষতা ও উচ্চ পেশাদারিত্বের দিক দিয়ে জাতিসংঘের মিশনে কাজ করা বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সব দেশে প্রশংসিত। জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অনন্য এসব অবদানের জন্য প্রশংসা করে এবং সম্মানজনক মর্যাদা দিয়ে থাকে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বর্তমানে আফ্রিকাসহ ১৩টি দেশে ছয় হাজার ৯২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী অত্যন্ত সুনাম ও মর্যাদার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯৩ জন নারী শান্তিরক্ষী। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে মিশন সম্পন্ন করেছেন। 

এছাড়া, জাতিসংঘের নির্দেশে বিভিন্ন গোলাযোগপূর্ণ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। এই বছর তিন জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।

শান্তিরক্ষা মিশন শুরু ১৯৮৮ থেকে

আইএসঅপিআর সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ‘মিলিটারি অবজারভারস’ গ্রুপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করে চলেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদেরে প্রশংসা বিশ্বব্যাপী রয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সুনামের সঙ্গে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাসও লম্বা। ২০০৫ সালে আফ্রিকার কঙ্গোতে নয়জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৬৮ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত হয়েছেন। উচ্চ পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করেছে বাংলাদেশ। গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্বীকৃতিও মিলেছে জাতিসংঘের।

দিবসটি উপলক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি থাকছে

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, বুধবার সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণে শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪ এর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়া, বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের আত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। 

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিককে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ টক-শো প্রচারিত হবে। শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ইতোমধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আইএসপিআর আরও জানায়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ ও আহত শান্তিরক্ষীদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

এমএসি/কেএ