বৃষ্টি থামার পরও সরেনি রাজধানীর সড়কের পানি। কোথাও পায়ের গোড়ালি আবার কোথাও হাঁটু সমান ময়লা পানি। উপায়ন্তর না পেয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন পানি মাড়িয়েই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। কেউ জলাবদ্ধ থাকা রাস্তাটুকু ভ্যানগাড়িতে আবার কেউ রিকশায় পার হচ্ছেন। এমন চিত্র রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার নায়েম রোডের।

মঙ্গলবার (২৮ মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই এলাকার নিউমার্কেট এবং মিরপুর সড়কে নুরজাহান মার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনের মূল সড়কে পানি জমে আছে। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মার্কেটের দোকানি এবং সড়কে বের হওয়া পথচারীরা।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাতের বেলা পানির পরিমাণ আরও বেশি ছিল। সকাল হতে হতে পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দোকানে পানি উঠে কিনা এমন শঙ্কায় সকাল থেকেই দোকানে এসেছে তারা। তবে আজ মঙ্গলবার ওই এলাকার মার্কেটগুলোর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে অধিকাংশ দোকানই বন্ধ দেখা গেছে। যেগুলো খুলেছে সেখানেও সকাল থেকে তেমন ক্রেতার দেখা নেই।

রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি হলে ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নুরজাহান মার্কেটে পানি উঠে যায়। কারণ, সড়কের চেয়ে এই মার্কেটের ফ্লোর খানিকটা নিচু। সেজন্য সব সময় আমরা শঙ্কার মধ্যে থাকি। রাতের বৃষ্টিতে বাইরের ফুটপাতে দোকানগুলোতে পানি উঠলেও মার্কেটের ভেতরে ফ্লোরে পানি এসেছে। তবে কোনও দোকানের ভেতরে পানি ঢুকেনি।

আফজাল হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই নাজুক। যার কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই সড়ক ডুবে যায়। এখন যে পরিমাণ পানি আছে, তা ধীরে ধীরে সরে যাবে। কিন্তু আবার যদি বৃষ্টি হয় তাহলেই সমস্যা হবে।

অপরদিকে বেশি বিপাকে পড়েছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকাটির একমাত্র সড়কেই জমে আছে হাঁটু সামান পানি। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দা এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে আশা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। হাঁটুপানি থাকায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার উপায় নেই। বাধ্য হয়েই অনেকে রিকশায় ও ভ্যানগাড়িতে চড়ে গন্তব্য পৌঁছাচ্ছেন।

নায়েমের প্রশিক্ষণ নিতে আসা নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেন, বছরের পর বছর এখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে থাকে। কর্তৃপক্ষের কোনও নজরদারি নেই। একটি দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমীর সামনের সড়কের এমন বেহাল অবস্থা কখনও চিন্তা করা যায় না। এর পাশেই আবাসিক এলাকার যারা রয়েছেন তাদেরও সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

পানি জমে থাকার কারণে সকালে স্কুল কলেজে যেতে পারেননি এমন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আফরোজ আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হওয়ার পরে দেখি এই অবস্থা। ওই সময় কোনও রিকশাও পাইনি। যার কারণে শেষ পর্যন্ত আমার ছেলে আর ক্লাসে যেতে পারেনি। এখন বেলা বাড়ার সাথে সাথে রিকশা পাওয়া গেলেও ভাড়া অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। বছরের পর বছর আমাদের এমন কষ্ট করতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে যায়। দেখার কেউ নেই। এই আবাসিক এলাকায় হাজার হাজার মানুষ থাকেন। তাদের কথা চিন্তা করে হলেও কর্তৃপক্ষের দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।

আরএইচটি/পিএইচ