এমপি আনার হত্যাকাণ্ড
আলামত-ডিএনএ নিয়ে ঢাকার ডিবি-কলকাতার সিআইডির তদন্ত
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে ভারতের কলকাতায় হত্যা নিয়ে দুই দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও খুনের আলামত ও ডিএনএ প্রতিবেদন নিয়ে দুই দেশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর কলকাতার সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ওই ঘটনায় রোববার (২৬ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তদন্তের স্বার্থে কলকাতা গেছেন। বাকি দুজন হলেন– ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিআইডির সঙ্গে বৈঠকে করেছেন।
এ ব্যাপারে রোববার রাতে হারুন অর রশীদ বলেন, সকালে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে সরকারের নির্দেশনায় ভারতে আসি। তদন্তের অংশ হিসেবে দুপুরে নিউটাউন থানা পরিদর্শন করি। থানায় আমাদের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করেন অ্যাডিশনাল ডিআইজি সোমা দাস ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
‘পরে সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান ড. আর রাজাশেকরনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যথেষ্ট আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কাজ করছেন এবং আমাদেরও সহযোগিতা করছেন।’
হারুন বলেন, আমাদের বিশ্বাস অচিরেই আমরা এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।
অন্যদিকে কলকাতার সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনে যে এমপি আনার খুন হয়েছে তা প্রায় ৯০ শতাংশ সঠিক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ওই ভবনে লেগে থাকা রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও হাতের ও পায়ের আঙ্গুলের ছাপ ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করে ধারণা করা হচ্ছে ওই মরদেহটি এমপি আনারের।
এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এমপি আনারসহ ৩-৪ জন ওই ভবনে ঢুকেছেন। বাকিরা বের হলেও এমপি আনারের ওই বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো ফুটেজ নেই। অর্থাৎ সশরীরে জীবিত অবস্থায় তিনি বের হননি। ওই ভবনের নিরাপত্তা কর্মীদেরও একই ভাষ্য। তবে মরদেহের কোনো অংশ পাওয়া গেলে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যেত যে এটা এমপি আনারেরই মরদেহ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলকাতায় পৌঁছে ডিবির প্রতিনিধি দলটি প্রথমেই পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুম পরিদর্শন করে। কলকাতার সিআইডি পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন আলামত নিয়ে আলোচনা করে। পরে কলকাতা সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে যান ডিবি কর্মকর্তারা। সেখানে সিআইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার জিসানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিবির কর্মকর্তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে বারবার এমপি আনারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীনের নাম আসছে। তাকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুইয়া শাহিনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিলেও তা বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি এসএমএসে বলছিলেন দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে ফোন না দিতে বলেন। পরে ১৮ মে ভারতে নিখোঁজের জিডি করা হয়। ২২ মে ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় কলকাতার সিআইডি।
জেইউ/এসএসএইচ