বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, বাংলাদেশে ঈদযাত্রায় বসিয়ে রাখার মতো পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। বরং চাহিদার তুলনায় যানবাহন খুবই কম। হজের সময় কিন্তু সৌদিতে নতুন নতুন বাস নামানো হয়। হজের পরও সেসব বসেই থাকে। আমাদের দেশে সে অবস্থা নেই। বরং ঈদ এলে পুরোনো বাস নেমে আসে সড়কে।

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, বিআরটিএর দায়িত্ব এই পুরোনো বা ফিটনেসবিহীন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা। বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশে ও ট্রাফিক পুলিশে জনবল বাড়ানো দরকার। জনবল কম থাকার কারণে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষ্যে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজট মুক্ত রাখতে রোববার (২৬ মে) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় শাজাহান খান বলেন, হাইওয়ে পুলিশ গঠনের প্রস্তাব আমরাই দিয়েছিলাম। কারণ প্রতি রাতে মহাসড়কে ডাকাতি ঘটত। দায় এসে পড়ত চালকদের ঘাড়ে। সেজন্য পরে এ সরকারের আমলেই হাইওয়ে পুলিশ গঠন করা হয়। এখন কিন্তু সড়কে ডাকাতি প্রায় শূন্যের কোটায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যানজট নিরসন সক্ষমতা কিন্তু হাইওয়ে পুলিশের আছে। কিন্তু জনবল খুবই কম।

মোটরসাইকেলে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে দাবি করে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তার ৪০ শতাংশ ঘটে মোটরসাইকেলের কারণে। এরপর নছিমন, করিমন, ভটভটি, আরও ছোট ছোট যানবাহন তো চলেই। শতকরা ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন।

প্রতিটি দুর্ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, কেন দুর্ঘটনা ঘটল বের করা দরকার। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে পারলে অনেক কিছুই সমাধান সম্ভব।

যাত্রী, পথচারীদের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাজাহান খান বলেন, আমাদের অনেক সচেতনতার অভাব। খালি চালকদের দায় দিয়ে লাভ কি। লক্ষ্য করেছেন মেট্রোরেলের ফেনসি বা রোড ডিভাইডারের রেলিং কীভাবে পুরুষ-নারীরা টপকাচ্ছে। এখন এই অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের সময় যদি একটা দ্রুতগামী বাসের নিচে পড়ে তাহলে দোষ কার? আমাদের অসচেতনতার দায় কি চালকের? দায় কিন্তু আমরা চালকদেরই দিচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার তদন্ত হোক, বের করা হোক কার কতটুকু দায় ছিল। আমি বলতে চাই না চালকরা নিরপরাধ। কিন্তু যে লোকটা মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছে সে যদি দুর্ঘটনায় মারা যায় তাহলে দায় কেন চালকের হবে?

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, মফস্বলে বেশিরভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজনই মারা যাচ্ছে। তিনজন নিয়ে চলাচল করে। হাইওয়েতে কোনোক্রমেই তো নছিমন করিমন ভটভটি চলতে দেওয়া উচিত না।

এ শ্রমিক নেতা বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ঈদের আনন্দ যেন নিরানন্দে পরিণত না হয়।

মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমাদের গাড়ির চালকরা ফেরেশতা না। আমাদের কারণেই যানজট হয়। আবার পুলিশের গাফিলতি আছে। কোথাও চাঁদাবাজি হয়।

গত ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রা স্বস্তির ছিল দাবি করে তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ড্রোন কিনে ব্যবহার করলেন মহাসড়কে। কোথায় কী সমস্যা তা দেখেছে হাইওয়ে পুলিশ। এবারও যেন সেটা করা হয়। দরকার হলে ড্রোন আরও কেনা হোক।

এই শ্রমিক নেতা বলেন, গত ঈদের পর ফিরতি যাত্রায় দুটো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায় সড়কে। ঈদের পর একটু শিথিলতা আসে। যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটেনি। কারণ আমরা সচেতন ছিলাম। ফেরার সময় গা ভারি হয়ে যায়, কত আর খাটব আমরা। এই করতে করতে রিলাক্স করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

রাঙ্গা বলেন, গত ঈদে রুট পারমিট নাই, ফিটনেস নাই, বিধ্বস্ত গাড়িটাও কিন্তু সড়কে চলেছে। এবার এসব ধরতে হবে। আমাদের পক্ষে ধরা সম্ভব হয় না। ঢাকা থেকে বের করে দিলেও জেলাতে চলে। ফিটনেস না থাকলে এসব যানবাহন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের অত্যাচারে আমরা মহাসড়কে পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এক পা চলতে পারব না। অনেক কথা হয়েছে, কি করে সব সমস্যার সমাধান করা যায়, সেটা নির্ধারণ করতে হবে।

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা বাস-ট্রাক ওনার্স গ্রুপ, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, পণ্য পরিবহন বিভাগ, বাংলাদেশ ট্যাংকলরী ওনারস অ্যাসোসিয়েশন, বাস মালিক সমিতি, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের নেতারা ছাড়াও হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জেইউ/এসএসএইচ