সাধারণত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর ক্ষেত্রে ‘চোখ ফোটা’ বলে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে। কোনো ঘূর্ণিঝড়ের চোখ ফুটে গেলে সেটাকে খুবই ভয়ংকর বিবেচনা করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমালও ‘ক্লাউড ব্যান্ড’ তথা মেঘমালা ঘেরা একটা রাউন্ড শেপ নিচ্ছে। তাই আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন রেমালও ‘চোখ’ তৈরি করতে পারে এবং এটির বিচ্ছুরণ (ফুটে যাওয়া) ঘটতে পারে। তেমনকিছু হলে এই ঘূর্ণিঝড় ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। 

রোববার (২৬ মে) আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, ধারণা করছি ঘূর্ণিঝড় রেমাল সিডর বা আম্ফানের মতো শক্তিশালী নয়, বরং মাঝারি মাত্রার একটা ঝড় হিসেবেই এটি উপকূলভাগ অতিক্রম করতে পারে। তবে এটি যদি ‘চোখ’ তৈরি করে এবং সেটি ফুটে যায় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

বিডব্লিউওটির গবেষকেরা বলছেন, ঘূর্ণঝড় রেমাল তার পূর্ণ শক্তিতেই উপকূলভাগ অতিক্রম করতে পারে। একটি সাইক্লোনের সর্বোচ্চ শক্তি ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার। কিন্তু এটি যখন উপকূল অতিক্রম করে তখন তার শক্তিমাত্রা ক্যাটাগরি-৩ বা ৪ এ নেমে যায়। কিন্তু রেমালের ক্ষেত্রে এমন হবে না। যদি এর সর্বোচ্চ গতি ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় হয় তবে এটি এই শক্তি বিন্দুমাত্র না কমিয়েই উপকূভাগ অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো বঙ্গোপসাগর জুড়েই কনভেক্টিভ ওয়েভ এর কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে রসভি, কেলভিন এবং এমজেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে খুব বেশি। এগুলোর প্রভাবেই রেমাল দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করছে।

তাদের ধারণা, ল্যান্ড ফলের জন্য আরো সময় পেলে এটি আরো শক্তিশালী হতে পারতো। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যাটাগরি-১ এর সীমানায় একে আটকে থাকতে হতে পারে।

রেমালের প্রভাবে যেমন জলোচ্ছ্বাস হতে পারে

বিডব্লিউওটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় ৮-১০ ফুট বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যা জোয়ারের সময় আঘাত হানলে উচ্চতা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের দ্বীপ, বাগেরহাটের শরনখোলা, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদী মোহনা, বরগুনা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালি, বরিশালের নিচু এলাকা ও দ্বীপ, ভোলা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপগুলো এই জলোচ্ছ্বাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ঘূর্ণিঝড় যেখানে আঘাত করে তার ডান পাশে তীব্রতা বেশি থাকে বলেও জানান তারা।

মূলত, শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে গভীর নিম্নচাপটি সাইক্লোন রেমালে পরিণত হয়েছে। এটি মোংলা থেকে প্রায় ২৫০ কি.মি. দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। যার অগ্রবর্তী অংশ আজ রোববার (২৬ মে) বিকেল নাগাদ উপকূলভাগ স্পর্শ করবে এবং সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ বর্ডার সংলগ্ন সুন্দরবনের উপকূলভাগ অতিক্রম করা সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আরএইচটি/এমএইচএন/জেডএস