নিজের নামে নেই কোনো হজ এজেন্সির লাইসেন্স। অথচ ভুয়া লাইসেন্স দেখিয়ে হজে পাঠানোর কথা বলে নেওয়া হতো টাকা। শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে টাকা জমা রাখা হতো। পরে সেই টাকা হজের কাজের ব্যবহার না করে উঠিয়ে উধাও। শুধু তাই নয়, বদলি হজের নামে দুই জনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। চলতি বছর হজে পাঠানোর নামে এমন এক প্রতারকের খোঁজ পেয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২০ মে) রাতে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে হজে পাঠানো নামে দিয়া ইন্টারন্যাশনাল হজ এজেন্সির কথিত মালিক মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি ৭৫ জন হাজির টাকা নিয়ে উধাও। তার কোনো হজ লাইসেন্স নেই। শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে রংপুরে ইসলামী ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। যার নং-২০৫০৩৩৩০১০০১৫৫৯১৬। এই অ্যাকাউন্টে সাধারণ হজযাত্রীদের হজের টাকা সংগ্রহ করেন।

এতে বলা হয়, এই ব্যক্তি চলতি বছর ৭৫ জন হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন করেন। পরে লিড এজেন্সি হিসেবে প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিদের চট্টগ্রামের আল ইমাম হজ্জ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরের কাছে চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। চুক্তি অনুসারে হজযাত্রীদের কাছ থেকে হজের টাকা এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি লিড এজেন্সি আল ইমাম হজ্জ কাফেলাকে ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০০ টাকা দেননি। ফলে ওই এজেন্সি হজযাত্রীদের জন্য মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া, ভিসা ও বিমান টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি। ভিসা করার জন্য সৌদি সরকারের দেওয়া সময়সীমা পার হওয়ার পরও হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট হজযাত্রী ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়তে হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ আলী এলাকার নিরীহ হজযাত্রীদের কাছে নিজেকে হজ এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকে। দিয়া ইন্টারন্যাশনাল নামে তার কোনো হজ এজেন্সি বা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও তিনি একটি হজ এজেন্সির নাম ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে হজযাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। হজের আগে ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া টাকা তোলার বিধান না থাকলেও তিনি সেই টাকা তুলে নিয়েছেন। তার নিজের এজেন্সি না থাকায় চট্টগ্রামের আল ইমাম হজ্জ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন করে সেই এজেন্সিকে হজের খরচের সম্পূর্ণ টাকা বুঝিয়ে দেননি। এভাবে তিনি একের পর এক প্রতারণা করে চলছেন।

প্রতারক মোহাম্মদ আলী হজযাত্রীদের জমা করা টাকা হজের কাজে ব্যবহার না করে তুলে নিয়েছেন। তিনি ৭৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে ২৫ জনের মক্কা-মদিনায় হোটেল ভাড়ার দায়িত্ব নিজে রাখার পরও তাদের হোটেল ভাড়া করেননি। তিনি এস এম আতিকুর রহমান ও মোনতাসির ইসলামকে প্রতিস্থাপনের (একজনের পরিবর্তে অন্যজন হজে যাওয়া) মাধ্যমের হজে নেওয়ার জন্য দিয়া ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে ৪ কিস্তিতে মোট ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। টাকা নিয়েও একজনকে প্রতিস্থাপন হিসেবে হজে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

তার প্রতারণা ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো হজযাত্রী বা ওমরাহ যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে।

এনএম/এসএসএইচ