মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর অবরোধ করে রেখেছে রিকশাচালকরা। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর যানজট নিরসন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সহজ করার লক্ষ্যে নগরীর প্রধান-প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপদেষ্টা পরিষদ। গত ১৫ মে এ সংক্রান্ত এক সভায় ‘ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ’ করার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এই অভিযানে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে অনেকাংশে যানজট কমেছে। যার ফলে, সকালে অফিসগামী মানুষরা যানজট মুক্ত পরিবেশে অফিসে যাতায়াত করতে পারছে। তবে সড়কে থাকা অন্যান্য যানবাহনের কিছু অব্যস্থাপনার কারণে কোথাও কোথাও জটলার সৃষ্টি হয়েছে। 

রাজধানীর সেগুন বাগিছা থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে ২০ মিনিটে গুলশান চলে এসেছেন নাদিম মোস্তফা নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী। তিনি বলেন, এটা কল্পনাও করা যায় না যে, এতো কম সময় অফিসে পৌঁছে যেতে পারব। রাস্তায় কোনও যানজট ছিল না। পরে, ফেসবুকে দেখলাম, সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। সাধারণত ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি রিকশার কারণে মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। সেখানে আজকে পুরো রাস্তায় তেমন কোনও যানজট ছিল না।

তিনি আরও বলেন, এই রাস্তায় দিয়ে অফিসে আসতে কমপক্ষে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় লাগতো।  

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ নিয়ে যেমন নাগরিকদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, তেমনি তার বিপরীত চিত্রও পাওয়া গেছে।

বিকল্প কোনও বাহনের ব্যবস্থা না করে রিকশার বন্ধ করার কিছুটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে অনেক স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে। তাদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যাওয়া কারণে প্যাডেল রিকশা ৩০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা ভাড়া চাইছে। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষণ রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ হাজীপাড়া থেকে রিকশায় করে প্রতিদিনই কর্মস্থলে যান আদিল হোসেন। তিনি বলেন, আজকে রিকশা না থাকায় কিছুটা পথ বাসে করে, আর কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হয়েছে। রিকশা বন্ধ করার নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের অনেক এলাকা আছে, যেখানে গণপরিহন যায় না। সেখানে যাওয়ার একমাত্র বাহন হচ্ছে রিকশা, সিএনজি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। এখন আপনি বিকল্প কোনও বাহনের ব্যবস্থা না করে রিকশা বন্ধ করতে পারেন না। নাগরিক সুবিধার কথাও চিন্তা করতে হবে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে রিকশাচালকদের আন্দোলনের একটি ছবি শেয়ার করে একজন লিখেন, আমি এবং আমরা ঢাকাবাসীর প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ বাসিন্দা, যারা ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক নয়। আমাদের নির্ভর করতে হয় রিকশার ওপর। বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া, মা-বাবাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে, বাড়ি থেকে প্রধান সড়কে যেতে রিকশা প্রয়োজন। আজকে দেখলাম রাস্তা একদম ফাঁকা। কয়েকটি প্যাডেল রিকশা চলাচল করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিশ্বের কোনও দেশ বিকল্প বিবেচনা না করে জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয় না বলেও প্রশ্ন রাখা হয়।

এদিকে সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীর মিরপুর-১০, পল্লবী, কালশী, ইসিবি চত্বর, তালতলা ও বাসাবো এলাকায় বিক্ষোভ করছেন চালকরা।

২০২৩ সালের বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে- যাদের মোটর চালিত গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই, এমন চালকদের বেপরোয়া কারণে ব্যাটারি রিকশার স্পষ্ট নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। ওই বছর ৮ হাজার ৫৫টি যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এর মধ্যে ১৪.৪৭ শতাংশ ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং ইজিবাইক।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় ১১ লাখের বেশি প্যাডেল রিকশা এবং ২ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে।

গত ১৫ মে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপদেষ্টা পরিষদ ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, সারাদেশে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং এসব যানবাহনে হতাহতের হার বেশি। ঢাকা শহরে কোনও ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চলবে না। এর আগে আমরা ২২টি হাইওয়েতে এটি নিষিদ্ধ করেছিলাম।
 
কাদের বলেন, এবার এসব থ্রি-হুইলার যাতে শহরের রাস্তায় চলতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

এএইচআর/এসএম