পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা মেলে ধরেছেন বাবর আলী। রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টায় চূড়ায় ওঠেন তিনি। এই দিনটির জন্য বাংলাদেশকে দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছুঁয়েছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। 

২০১০ সালে মূসা ইব্রাহীমের হাত ধরে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছায় লাল-সবুজের পতাকা। সেই পথ ধরে ২০১১ সালে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এম এ মুহিত এভারেস্ট জয় করেন। তার এক বছর পর ২০১২ সালে এম এ মুহিত মাউন্ট এভারেস্টে উড়ান বাংলাদেশের পতাকা। তবে পাওয়ার আনন্দের মাঝে রয়েছে বেদনার স্মৃতি—২০১৩ সালের ২১ মে এভারেস্ট জয় করে নামার পথে মারা যান পর্বতারোহী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন। 

ছবিতে বাবর আলী এভারেস্ট জয়ের গল্প

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন বাবর। তবে চাকরি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার কর্মযজ্ঞ শুরু করেন তিনি। 

চলতি বছরের ১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন চট্টগ্রামের বাবর আলী। পর্বতারোহণের প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনার কাজ শেষ করে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।

সেখানে অবস্থান করেন সপ্তাহখানেক। ট্রেকিং পর্ব শেষ করে পৌঁছান এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে। মূল অভিযান শুরু হয় সেখান থেকে। পর্বতের চূড়ায় উঠতে সময় লাগে প্রায় দুই মাসের মতো।

বাবরের সংগঠন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। ২৬ এপ্রিল বেজক্যাম্প থেকে এভারেস্টের ক্যাম্প ২ পর্যন্ত ঘুরে এসে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব সমাপ্ত করেন।

১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে বাবরের যাত্রা শুরু হয় চূড়ার দিকে। প্রথম দিন সরাসরি উঠে যান ক্যাম্প ২-এ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর ১৮ মে উঠেন ক্যাম্প ৩ এবং ১৯ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ।

২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’। ১৮ মে যাত্রা করে ১৯ মে ভোরে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে উঠেন তিনি।

এদিকে যাত্রা শুরুর আগে বাবর আলী জানিয়েছিলেন, মাউন্ট এভারেস্টে জয় করা অনেকের স্বপ্ন। প্রতিবছর হাজারো পর্বতারোহী এভারেস্টের পথে হাঁটেন। এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পর আরেক পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে ওঠার চেষ্টা বাংলাদেশ থেকে আগে হয়নি। আমি সেই চ্যালেঞ্জটাই দিয়েছি।

সে অনুযায়ী এভারেস্ট জয়ের পর বাবরের পরবর্তী লক্ষ্য পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসের চূড়াও জয় করা।

রোববার ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারও শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা। সব অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন সেটির চূড়ায়।

৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী এখন পর্যন্ত সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন।

এমএসএ/এমএসএ