নড়াইলের লোহাগড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

গ্রেপ্তাররা হলেন প্রধান আসামি শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও মো. রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)। 

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

র‍্যাব জানায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতা ছিল। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। 

আরাফাত ইসলাম বলেন, গত ১০ মে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।  একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে র‌্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-৬, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে ওই  হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যতম আসামি ও শুটারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মূলত ২০২২ সালের বিরোধের জের ধরে ভিকটিম মোস্তফা কামাল ও আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে মারামারি হয়। সেই মারামারিতে লিপন গুরুতর আহত হন এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরবর্তী সময়ে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা ভিকটিম মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা সুইচ গিয়ার চাকু ও রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ওৎ পেতে থাকে। ভিকটিম মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন সাজেদুল। যার মধ্যে দুই রাউন্ড গুলি ভিকটিমের বুকে ও পিঠে লাগে।

গ্রেপ্তার সাজেদুল স্থানীয় একটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি লিপনের অন্যতম প্রধান সহযোগী। তিনি লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও মাদক সেবনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করতেন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি, চুরি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার রহমত উল্লাহ শেখ পেশায় একজন শ্রমিক। তিনি সাজেদুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ মারামারি, ছিনতাই ও মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার জন্য তাকে এক লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে লোহাগড়া থানায় মারামারি সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন বলেও জানা যায়।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার পাভেল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনিও লিপনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত তিনটি মামলা রয়েছে। 

আর গ্রেপ্তার মামুন মোল্যা পেশায় একজন চালক। তিনি লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তার কাছে থাকা ছুরি ও চাকুসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘটনার দিন ভিকটিম মোস্তফা কামালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত দুইটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এমএসি /কেএ