সদ্য বিদায়ী এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ২ হাজার ১১৯ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এমন তথ্য দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি বলছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল রোড এসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (iRAP) মেথড অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা সম্পদ ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে সম্পদের ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

রোববার (১২ মে) সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো 'এপ্রিল মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে' এ তথ্য জানা যায়। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৭২টি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৩৪ জন। তবে, ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল-সহ অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা ২ হাজারের বেশি হবে।

এরমধ্যে ৩১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৬.৬৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৬ জন।

এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন (একটি লঞ্চে আগুন ধরলে নামতে গিয়ে ৬০ জন আহত হয়েছেন)। ৩৮টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭৬ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর ও বান্দরবান জেলায়। এই ২টি জেলায় স্বল্প মাত্রার ৫টি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকায় ৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮' বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

/এমএইচএন/এমএসএ