উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বহু মানুষ। একটা সুন্দর জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো এসব মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব।

সম্প্রতি কিরগিজস্থানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ভুক্তভোগীর কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া ট্রাভেল এজেন্সির মালিকসহ পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্যকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে সিআইডি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সিআইডির একটি চৌকশ টিম গত সোমবার (৬ মে) মানব পাচারকারী চক্রে সঙ্গে জড়িত ‘জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদসহ (৩৫) চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, শারমিন হোসেন লাবনী (৩৬) ও আরিফুর রহমান সাদী (২৪)।

প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে আজাদ রহমান বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নলিয়া পাড়ার রিকশাচালক মোহাম্মদ সোনা মিয়া ইউটিউবে ‘জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে দেখতে পান ৫ লাখ টাকায় কার ওয়াশের ওয়ার্কিং ভিসায় কিরগিজস্থানে লোক নেওয়া হবে। যেখানে বেতন হবে ৬০ হতে ৬৫ হাজার টাকা এবং খাওয়া নিজের, থাকা কোম্পানির। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে তিনি ‘জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ এর নয়াপল্টন অফিসে যোগাযোগ করেন এবং কিরগিজস্থানে যাওয়ার জন্য গরু, রিকশা, ঘর বিক্রি করে টাকা দেন। তার সঙ্গে ফরিদপুরের আকাশ শেখ (২১) ও আকতার সরদার (২৩) নামে আরও দুজন কিরগিজস্থানে যাওয়ার জন্য ওই এজেন্সিকে টাকা দেন।

পরবর্তীতে তাদের কিরগিজস্থানের ভিসা ও বিমান টিকিট প্রদান এজেন্সিটি। তারা ভিসার কপি ও বিমান টিকিট নিয়ে গত ৭ এপ্রিল কিরগিজাস্থানে যাওয়ার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন পুলিশ অনলাইনে তাদের ভিসার তথ্য না পেয়ে যাত্রা স্থগিত করে। পরবর্তীতে তারা ‘জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে সদুত্তর না পেয়ে ২২ এপ্রিল ডিএমপির পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন।

সিআইডি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সূত্রের মাধ্যমে এজাহারভুক্ত আসামি জান্নাত ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ইব্রাহীম মল্লিক নাহিদসহ তিনজনকে গতকাল রাতে পল্টন থেকে গ্রেপ্তার করে।

মামলা তদন্তকালে জানা যায়, আসামিরা এর আগে যাদের অভিবাসী কর্মী হিসেবে কিরগিজস্থান প্রেরণ করেছে তাদের অধিকাংশই সেখানে মানব পাচারের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রটির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

জেইউ/এসকেডি