দুদিন পর ফ্লাইট শুরু, এখনো অনিশ্চয়তায় ৭০ হাজার হজযাত্রী!
· ভিসা না হওয়ায় আটকে গেছে বিমানের টিকিট
· ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা
আগামী বৃহস্পতিবার (৯ মে) শুরু হচ্ছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। আগামী বুধবার হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ ভিসা সমস্যায় এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি বেশিরভাগ হজ এজেন্সি।
সর্বশেষ তথ্য বলছে, ভিসা আবেদনের বর্ধিত সময়ও শেষ হচ্ছে কাল মঙ্গলবার। এখন পর্যন্ত আবেদন করতে পারেনি প্রায় ৮০ শতাংশ হজ এজেন্সি।
বিজ্ঞাপন
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর হজ ভিসার জন্য আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৯ এপ্রিল। ধর্মমন্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ভিসা আবেদনের সময় ৭ মে পর্যন্ত করা হয়। ৮ দিন বাড়ানো হলেও এখনও ৭৫ শতাংশের বেশি হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করেনি এজেন্সিগুলো। বাকি একদিনের মধ্যে ৭০ হাজারের বেশি হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যায় এই সংকটে করণীয় ঠিক করতে হজ এজেন্সিদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ভিসা আবেদনের সময় আরও বাড়ানোর জন্য সৌদি সরকারকে চিঠি দিতে এজেন্সিগুলো মন্ত্রণালয়কে চাপ দেয়। শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
অনিশ্চয়তায় ৭০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৩ হাজার ২০৯ জন নারী-পুরুষ পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে যাবেন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। বাকি ৪ হাজার ৩১৪ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়। সাত শতাধিক হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের নিবন্ধন করেছে। ২৫৯টি লিড এজেন্সি হজযাত্রীদের মূল ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত মাত্র ৫৫টি এজেন্সির আংশিক ভিসা আবেদন হয়েছে। বাকি ২০৪টি এজেন্সি ভিসা প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। এই এজেন্সিগুলোর অধীনে মোট ৭০ হাজারের বেশি হজযাত্রী রয়েছে।
আরও পড়ুন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিনে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর ভিসার আবেদন করা সম্ভব নয়। ফলে ফের ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে এজেন্সিগুলো। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় সেটাতে রাজি হয়নি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, হজ ভিসার জন্য আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ধর্মমন্ত্রীর অনুরোধে সেই সময় ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, বাড়তি ৮ দিনে বেশিরভাগ হজযাত্রীদের ভিসার আবেদন করা সম্ভব হবে। কিন্তু মোনাজ্জেমের (পবিত্র হজের সময় নিবন্ধিত হজ এজেন্সির মালিকের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী) ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় এবং সৌদিতে কাঙ্ক্ষিত ভাড়া বাড়ি ভাড়া করতে না পারায় সেই প্রক্রিয়া হোঁচট খায়। ফলে শেষ সময়ে এসেও এখনো অধিকাংশ হজযাত্রীর ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব হয়নি।
মূল সংকট বাড়ি ভাড়ায়
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হজ এজেন্সিগুলো বাড়ি ভাড়া করতে গাফিলতি করেছে। কম রেটে বাড়ি ভাড়া করার জন্য প্রতিবার শেষ সময়ে এসে বাড়ি ভাড়া করেন তারা। এবারও তাই করেছেন। এবার এটা করতে গিয়ে নতুন আইনের ফাঁকে পড়ে যায় হজ এজেন্সিগুলো। বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্ধারিত এজেন্সি প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের ভিসা আটকে দেয় সৌদি সরকার। ফলে হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরবে যেতে পারেননি তারা। এ জায়গায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েও পায়নি বলে অভিযোগ করছে এজেন্সিগুলো।
এপ্রিলের শেষের দিকে বিকল্প পদ্ধতিতে মোনাজ্জেমদের ভিসা করার জন্য জিও (সরকারি পত্র) দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজেন্সির প্রতিনিধিরা এখন সৌদি আরবে গিয়ে বাড়ি ভাড়া করতে হিমশিম খাচ্ছে। হেরেম শরিফের কাছে বাড়ি না পেয়ে অনেক দূরে বাড়ি খুঁজছেন তারা। সেখানেও ভাড়া বেড়ে গেছে। ফলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রীতিমতো সংকট তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি হজ এজেন্সি এম জি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন বলেন, মোনাজ্জেমরা সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ায় সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করা যায়নি। ফলে হজযাত্রীদের এখন সদুত্তর দিতে পারছি না। ভিসা না পাওয়ায় বিমানের টিকিটও বুকিং দিতে পারছি না। আরও বেশ কিছু কাজ আটকে আছে ভিসা জটিলতায়।
জানতে চাইলে পল্টনের একটি হজ এজেন্সির মালিক সচিবালয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ভিসা জটিলতা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা মুশকিল। মোনাজ্জেমদের ভিসা জটিলতার ফলে অনেক সময় চলে গেছে। এজন্য বাড়ি ভাড়া করা যায়নি। আর বাড়ি ভাড়া না হলে ভিসার আবেদন করা যায় না। যদি ভিসা আবেদনের সময় বাড়ানো না হয় তবে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে। অনেক হজযাত্রী চলতি বছর হজেই যেতে পারবেন না।
তবে এ সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এখনো বেশিরভাগ এজেন্সির মোনাজ্জেমদের ভিসা নিশ্চিত করতে পারেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে সংকট উত্তরণ সম্ভব, আমরা চেষ্টা করছি।
ফাঁকা যাবে হজ ফ্লাইট
চলতি বছর ৮৩ হাজার হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ২২৮ হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। সে অনুযায়ী শিডিউল ঘোষণা করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার।
চুক্তি অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ১১৮টি ফ্লাইটে ৪৮ হাজার ৮৩৫জন হজযাত্রী বহন করবে। সৌদি এয়ারলাইন্স এবং ফ্লাইনাস এয়ার বাকি হজযাত্রী বহন করবে।
শিডিউল অনুযায়ী, আগামী ৯ মে প্রথম দিন তিনটি এয়ারলাইন্সের ৭টি ফ্লাইটে দুই হাজার ৭৮৫ জন হজযাত্রীর সৌদি আরব যাওয়ার কথা রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওইদিনের জন্য এখনো বুকিং বাকি ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম দিনেই যাত্রী সংকটে পড়তে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো। হজযাত্রীদের দ্রুত সময়ে ভিসা না করাতে পারলে প্রতিদিন বাড়বে ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা। গত বছরও একই অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন
ফ্লাইট শিডিউল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯ মে থেকে ১৮ মে- এই দশদিনের মধ্যে এয়ারলাইন্সগুলোতে সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ বুকিং হয়েছে ১১ মে। মাত্র ২০ শতাংশ বুকিং হয়েছে ১২ মে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বুকিং দেওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যাচ্ছেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হজযাত্রীরা ভিসা না পাওয়ায় এজেন্সিগুলো বিমানের টিকিট কাটতে পারছে না। এজন্য বুকিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে না।
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, আজ এটা নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবার কাছে থেকে সমস্যাগুলো শুনেছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করব।
এনএম/এমজে