রাজধানীর চিরায়ত সমস্যা যানজট। একের পর এক ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার পরও যানজট কমছে না। দিন-রাত এই শহরে যানজট লেগেই থাকছে। এতে নগরবাসীর ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে নাগরিকদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর তিনটি এলাকাকে যানজটের ‘হার্ট পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যানজটপ্রবণ এই তিন এলাকা হলো—গুলশান, তেজগাঁও ও রমনা ট্রাফিক বিভাগ।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিশ্লেষণে, এই এলাকাগুলোতে যানজট হলে এর প্রভাব অন্য ট্রাফিক জোন পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এই তিন এলাকার যানজট নিরসনে একজন করে বাড়তি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়েছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ মনে করছে, অতিরিক্ত অফিসার নিয়োগের ফলে এসব এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এর সুফল রাজধানীর অন্য সব এলাকাতেও পাওয়া যাবে।

বর্তমানে ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ৮টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলো হলো—রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, গুলশান, মিরপুর ও তেজগাঁও। এই আট বিভাগে একজন করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), একজন করে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এবং তিনজন করে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শুধুমাত্র ট্রাফিক রমনা বিভাগে চার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) দায়িত্ব পালন করছেন।

যে কারণে গুরুত্ব বেশি এই তিন বিভাগের

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর সবচেয়ে যানজটপ্রবণ এলাকা গুলশান, তেজগাঁও ও রমনা। এসব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হলে অন্যসব এলাকায়ও যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুলশান, রমনা ও তেজগাঁও এই তিনটি বিভাগ ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু বা হার্ট পয়েন্ট বলা চলে। আগে একটি বিভাগের ৪-৮টি জোনের জন্য একজন এডিসি দায়িত্ব পালন করতেন। এখন দুজন এডিসি মিলে প্রতি বিভাগের ৪-৮টি জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করে যাবেন। অতিরিক্ত এডিসি দেওয়ার পর কী ধরনের আউটপুট আসে সেটা আমরা বিবেচনা করব। ভালো আউটপুট এলে বাকি পাঁচ বিভাগেও একজন করে অতিরিক্ত এডিসি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যে কারণে গুরুত্ব গুলশানের

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ট্রাফিক গুলশান বিভাগে মোট জোন রয়েছে ৮টি। ৮টি জোন হলো গুলশান, মহাখালী, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, বাড্ডা, ভাটারা, বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত। এই আট এলাকার কোনো একটিতে যানজট সৃষ্টি হলে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এছাড়া মহাখালীতে রয়েছে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। টার্মিনালের কারণে মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। অন্যদিকে বাড্ডা কিংবা প্রগতি সরণিতে যানজট সৃষ্টি হলে তা রামপুরা হয়ে পৌঁছে যায় শান্তিনগর পর্যন্ত।

গুলশান বিভাগের অধীনে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাস অবস্থিত। ফলে এসব এলাকায় যানজট থাকলে বিদেশিদের সামনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

এসব বিষয় বিবেচনা করে গুলশান বিভাগকে ঢাকার যানজটের হার্ট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত মাসের ২৩ তারিখে নতুন একজন এডিসিকে গুলশান ট্রাফিক বিভাগে দেওয়া হয়েছে। এরপর বিভাগের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গুলশান উত্তরে একজন এডিসি দায়িত্ব পালন করবেন আর গুলশান দক্ষিণে আরেকজন এডিসি দায়িত্ব পালন করবেন। গুলশান দক্ষিণে রয়েছে গুলশান, মহাখালী, ক্যান্টনমেন্ট ও বনানী। গুলশান উত্তরে রয়েছে বাড্ডা, ভাটারা, বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত।

ভিআইপি মুভমেন্টেসহ নানা কারণে আলাদা গুরুত্ব রমনা ও তেজগাঁওয়ের

ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় ভিআইপি মুভমেন্ট বেশি ডিএমপির ট্রাফিক রমনা ও তেজগাঁও বিভাগে। এসব এলাকায় অনেক সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহন এই দুই বিভাগ দিয়ে বেশি চলাচল করে।

এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিকের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়তি একজন এডিসি পাওয়ার পর একজনকে দেওয়া হয়েছে নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি জোনে, আরকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাহবাগ ও রমনা জোনে। একজন এডিসির পক্ষে এক সময়ে ৪টি জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থার তদারকি করাটা কঠিন। এখন দুজন এডিসি হওয়ায় দুটি জোনের জন্য একজন এডিসি থাকবেন। এতে তদারকি বাড়বে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি হবে।

জানা যায়, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগকে তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ের দায়িত্বে যে এডিসি রয়েছেন তিনি তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও হাতিরঝিল জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে মোহাম্মদপুরের দায়িত্বে যে এডিসি রয়েছেন তিনি শেরেবাংলানগর, মোহাম্মদপুর ও আদাবর জোনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পালন করবেন।

এমএসি/এমএসএ