এবার একই লাইনে ‘মৈত্রী’ ও ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’, অল্পের জন্য রক্ষা
গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে তেলবাহী ওয়াগন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও ভুগছে রেল। এর রেশ না কাটতেই আবারও একই লাইনে চলে এসেছিল আন্তঃদেশীয় ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ও ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’। যা থেকে ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনা। তবে লোকোমাস্টারদের তৎপরতায় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে ট্রেন দুটি। সঙ্গে রক্ষা পেয়েছেন অসংখ্য যাত্রী।
শনিবার (৪ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে এই ঘটনা ঘটে। এজন্য স্টেশন মাস্টার দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনের পাঁচ নম্বর লাইনে দাঁড়ানো ছিল। ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল। অন্যদিকে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস (৭৬৯) রাজশাহীর উদ্দেশে যাচ্ছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর পশ্চিম স্টেশন পার হতে যাচ্ছিল ট্রেনটি। স্টেশন পার হওয়ার জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টারকে একটি পেপার স্লিপ দেন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার। ওই স্লিপে লেখা ছিল, ‘বঙ্গবন্ধু পশ্চিম স্টেশনের সিগন্যাল খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপনি হাত সিগন্যাল দেখিয়ে পাস করবেন।’
আরও পড়ুন
ফলে ধূমকেতু এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার অনেকটা ধীরগতিতে ট্রেন চালিয়ে ওই স্টেশনটি পার হতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় লোকোমাস্টার দেখতে পান ট্রেনের পয়েন্ট যে লাইনে সেট করা রয়েছে, সেই লাইনে অন্য একটি ট্রেন দাঁড়ানো অবস্থায় আছে। এমন অবস্থায় তিনি ট্রেনটি ওই পয়েন্টের আগে থামিয়ে দেন। পরে ট্রেনটি পেছনে নিয়ে অন্য লাইন দিয়ে স্টেশন পাস করানো হয়।
জানা গেছে, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন চালাচ্ছিলেন লোকো মাস্টার মহিদুল ইসলাম। তার সহকারী ছিলেন হেদায়েতুল আলআমিন।
বিষয়টি ‘ভুল হয়েছে’ স্বীকার করে দ্রুত চিঠি দেন স্টেশন মাস্টার। এ সংক্রান্ত একটি চিঠির অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সেই চিঠিতে ধূমকেতু এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টার ও গার্ডকে স্টেশন মাস্টার লিখেছেন, ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ৫ নম্বর লাইন থেকে ব্যাক করে হোম পর্যন্ত ৪ নম্বর লাইনে প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। আপনার অধীন ৭৬৯ নম্বর ট্রেনটি ভুলবশত ৫ নম্বর লাইনে প্রবেশ করে। এখন ৪ নম্বর লাইনে ব্যাক দিয়ে হোম পর্যন্ত যাওয়ার পর পুনরায় ৪ নম্বর লাইনে ওপিটি ২৭ দিয়ে রিসিভ করা হলো। বিষয়টা জরুরি।’
বিষয়টি নিয়ে লোকোমাস্টারদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা জানি রেল চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সিগন্যাল ব্যবস্থা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেল নন ইন্টারলক (ম্যানুয়াল) সিগন্যালে চলে। এই ম্যানুয়াল সিগন্যালে স্টেশন মাস্টার লাইনের দিক-নির্দেশনা দেন, আর পয়েন্টসম্যান লাইনে গিয়ে পয়েন্ট সেট করেন। এসব কাজে একটু হেরফের হলেই বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।’
‘গতকাল জয়দেবপুরে পয়েন্টসম্যান ভুল পয়েন্ট সেট করায় দুর্ঘটনা ঘটে। ফৌজদারহাট স্টেশনে কয়েকদিন আগে মুখোমুখি সংঘর্ষের জন্য অনভিজ্ঞ স্টেশন মাস্টার দায়ী ছিলেন। এ ছাড়া কিছুদিন আগে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা স্টেশনেও পয়েন্টসম্যানের ভুলের কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তারা বেশিরভাগই আউট সোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। রেল কিছুদিন পরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। অথচ সারাদেশে সরাসরি রেলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পয়েন্টসম্যান নেই। গুরুত্বপূর্ণ এসব স্টেশনের দায়িত্বে অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে যেসব কর্মকর্তা কাজ করাচ্ছেন তারাই মূলত এসবের জন্য দায়ী। দুর্ঘটনার কারণে যদি মাস্টার আর পয়েন্টসম্যানকে শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে তাদের পরিচালনাকারী বড় বাবুদেরও শাস্তি বা জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।’
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে তেলবাহী ওয়াগন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দুটি ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হন দুই ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ চারজন।
দুর্ঘটনার পর জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম রুটের ট্রেন চলাচল দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। বিকেলে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। এরপর শুরু হয় ট্রেন চলাচল। তবে শেষ হয়নি উদ্ধার অভিযান। এতে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে ট্রেন। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিলম্বে ছেড়েছে বেশকিছু ট্রেন। ঢাকাগামী কিছু ট্রেনেরও বিলম্বে ছাড়ার তথ্য মিলেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এমএইচএন/জেডএস