ওয়াসার গাড়ি থেকে কেনা পানি দিয়ে চলছে দিন/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

রাজধানীর বাড্ডাসহ আশপাশের এলাকায় গত একমাস ধরে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়েছেন। নগরীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওয়াসার অধিকাংশ পাম্প পানি পাচ্ছে না, ফলে বেশ কিছু এলাকায় পানির এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

নিয়মিত পানি না পেয়ে গত ১৫ এপ্রিল উত্তেজিত এলাকাবাসী পানির দাবিতে নতুন বাজার এলাকায় ওয়াসার মডস জোন-৮ অফিস ঘেরাও করে। তারা ওয়াসার অফিসে প্রবেশে করতে চাইলে ভাটারা থানার পুলিশ বাধা দেয়। জনগণ উত্তেজিত হয়ে পড়লে ভাটারা থানার পুলিশের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় ওয়াসার জোন অফিসের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়। তবুও পানির সংকট রয়েই গেছে। 

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিধিনিষেধে ঘরবন্দি বিভিন্ন এলাকার মানুষ। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে চলছে রমজান মাস। সব মিলিয়ে পানির চাহিদা বৃদ্ধির সময়ে নেই পানি। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।

বাড্ডা এলাকার ওয়াসার অনেক পাম্পের পাইপ তুলে সেগুলো আরও গভীরে বসানোর কাজ করা হচ্ছে। ওয়াসার পানির সংকট যেসব এলাকায় রয়েছে, সেসব এলাকার পাম্পে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ কারণেই পানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি পাঁচ তলা বাড়ির মালিক দুলাল আহমেদ। তিনি বলেন, আমার বাড়িসহ আশেপাশের প্রায় সব বাসাতেই পানির এমন সমস্যা। বারবার ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, আমরা কাজ করছি। কিন্তু এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনও সমস্যার সমাধান হয়নি। পানি পাওয়ার জন্য পানির মোটর চালিয়ে রাখলেও পানি পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় নিয়মিত ওয়াসার পানির গাড়ি থেকে পানি কিনতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এলাকাবাসীরা মিলে ওয়াসার কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। এখন বাধ্য হয়ে পানি কিনে ‍দিনে দুইবার ভাড়াটিয়াদের সরবরাহ করছি। অতিরিক্ত গরমকাল চলছে। এ সময় পানির এমনিতেই চাহিদা বেশি থাকে। সেইসঙ্গে এখন করোনাকাল। যেখানে আমাদের আরও অনেক বেশি পানির চাহিদা থাকার কথা, সেখানে আমরা পানিই পাচ্ছি না। পানি না থাকার কারণে অনেক ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে।

সেই বাড়িরই দুইতলার ভাড়াটিয়া মোর্শেদ হক পানি না থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় পানি নেই। এই করোনাকালের মধ্যে বাসায় যদি পানি না থাকে এরচেয়ে বড় ভোগান্তি আর কিছু হতে পারে না। রমজান মাসে একটি দিনও ভালো করে গোসল করতে পারি না। দিনরাত মিলিয়ে দুই বার বাসার মালিক কেনা পানি আমাদের সরবরাহ করেন। এই সামান্য পানি দিয়ে কি এক একটি পরিবারের দিন অতিবাহিত হয়? আমাদের বাসার মালিকসহ আশপাশের সব বাসার মালিকরা মিলে নিয়মিত ওয়াসার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে, সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদন জানাচ্ছে তবু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। যে কারণে আমরা একমাসের বেশি সময় ধরে তীব্র পানির সংকটে রয়েছি।

এ বিষয়ে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ ওয়াসার মডস জোন-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান বলেন, এখন পিক সিজন, তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। বাড্ডার কিছু কিছু এলাকায় সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। বাকিগুলোতে আমরা কাজ শেষ করায় এখন আর পানির তেমন সমস্যা নেই। তবে দুই এক এলাকার বিষয়ে অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। সেগুলোতে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুত এসবের সমাধান হয়ে যাবে। গরমকালে পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়, যে কারণে অনেক এলাকায় পানি পেতে সমস্যা হয়। এ অবস্থায় আমরা পাম্পে অতিরিক্ত পাইপ যুক্ত করতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী আমাদের কাজ চলছে, কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ও আসন্ন রমজান মাসে ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১০টি অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে গত ৪ এপ্রিল। কিন্তু এমন টিম গঠন করেও পানি সংকট সমস্যার সমাধান করতে পারছে না ওয়াসা। অথচ এই অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিম কোভিড সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ও আসন্ন রমজান মাসে ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকি করার কথা ছিল। কিন্তু পানি লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারণে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা।

এএসএস/এইচকে