চাঁদপুরের মতলব সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী সকল প্রকার যানবাহন থেকে টোল আদায়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সুপারিশ এবং চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব তদন্তেও অতিরিক্ত টোল আদায়, রশিদ না দেওয়া কিংবা রশিদের বাইরে লেনদেন ইত্যাদি অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের ইজারা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণে অবস্থিত মতলব সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাঁন এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে সেতুর টোল আদায়ে নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত টোল আদায়সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ সালে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আজগর হোসেনের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছিল। অভিযান ও অনুসন্ধান শেষে দুদক থেকে ইজার চুক্তি বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ দুদকের চাঁদপুর অফিস। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ এপ্রিল ইজারা চুক্তি বাতিলের চিঠি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

এ বিষয়ে দুদকের চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক সীমিত জনবল দিয়ে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। টোল আদায়ে অনিয়মে আমাদের অফিস থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। যেখানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম।

অন্যদিকে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের সুপারিশ ও আমাদের নিজস্ব তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইজারা কোটেশনের শর্ত ও তাদের সঙ্গে ২০২১ সালের ৭ জুলাই সম্পাদিত ইজারা চুক্তিপত্রের ২. ১৪ ও ২৪ নং শর্ত লঙ্ঘিত হওয়া এবং সেতুর ইজারা কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময়ে জমাদানের ব্যর্থতাসহ চুক্তিপত্রে শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় ইজারা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ জুলাই শর্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাঁন এন্টারপ্রাইজকে সেতুতে টোল আদায়ের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। টোল নীতিমালা ২০১৪ ও ইজারা কোটেশন এবং ইজারা চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রতিবারেই নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তির টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেতুর ইজারা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে বিভিন্ন যানবাহন থেকে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া যায়।

টোল আদায়ে রশিদ প্রদান না করা, বিভিন্ন গাড়িচালক ও মালিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে এর আগে বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে লিখিত ও মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। তাছাড়া এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট থেকে সরজমিনে অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইজারা কোটেশন ও চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে নিজস্ব  দপ্তর হতে গঠিত তদন্ত টীমও সরজমিনে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। সেখানে সম্পাদিত ইজারা চুক্তিপত্রের ২. ১৪ ও ২৪ নং শর্ত লঙ্ঘন হওয়া এবং সেতুর ইজারা কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময়ে জমাদানের ব্যর্থতা তথা চুক্তিপত্রের ১২নং শর্ত লঙ্ঘন হওয়ায় প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে ইজারা চুক্তি বাতিল করে গত ২৯ এপ্রিল থেকে টোল আদায়ের সার্বিক দায়িত্ব সওজ বিভাগের কাছ হস্তান্তর করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে খান এন্টারপ্রাইজের মালিক কাইয়ুম খানকে।

আরএম/এসকেডি