চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।

বৃহস্পতিবার (২ মে) জাল মৃত্যু সনদসহ তিনটি মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, সমাজে যে সমস্ত লোক গুরুতর অসুস্থ থাকে মিল্টন সমাদ্দার তাদেরকে নিয়ে তার বৃদ্ধাশ্রমে রাখতেন। তার আশ্রমে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করত তাহলে সে নিজেই তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিত। সে ডাক্তার না হয়েও ডেট সার্টিফিকেট দেয়। সে যে সার্টিফিকেট দেয় সেটাও ভুয়া। তার বক্তব্য অনুযায়ী তার আশ্রমে ১৮৯ জন মারা গেছে। মৃত সব ব্যক্তিদের কবর দেওয়ার সময় দেখা গেছে কারো পেটকাটা, কারো পিঠে কাটা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা ও ক্ষত।

তিনি বলেন, তার এক কোটি ২০ লাখ ফলোয়ার আছে। এসব ফলোয়ার তার ইনকামের কৌশল। সমাজে নিজের ভালো মানুষী মুখোশ দেখিয়ে এসব অন্যায়গুলো সে করেছে। এসব নিয়ে সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করেছে। পরবর্তীতে ডিবিও তদন্ত করছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে তার স্ত্রীসহ আরো কারা কারা জড়িত সেটাও তদন্ত করে বের করতে হবে। কারণ এরা দেশ ও সমাজের শত্রু। ভালো মানুষের মুখোশ পরে তারা এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। এ সমস্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, আদালতে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ মঞ্জুরির মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আরও অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে। আমি মনে করি এ মামলার সঠিক তদন্ত হয়ে সে যে অন্যায় এবং প্রতারণা করেছে সেগুলো বের হয়ে আসবে।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়। এরপর তার আশ্রমের টর্চার সেলে মারধর করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এদিকে আদালত চত্বরে মিল্টন সমাদ্দারকে মানবতার নৃশংস হত্যাকারী উল্লেখ করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন একাধিক আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।

এমএম/এমজে